আমতলীতে ভেঙে পড়েছে ২ কোটি টাকার সেতু, অনিয়মের অভিযোগ

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম

বরগুনার আমতলীতে ভেঙে গেল চাওড়া নদীর ওপর ২ কোটি টাকায় নির্মিত আয়রণ সেতু। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মানুষ।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুইজন যাত্রী নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোগাড়ি পার হচ্ছিল। ওই সময় সেতুর দুই-তৃতীয়াংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। অটোগাড়িসহ যাত্রীরা নদীতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা অটোগাড়িটি নদী থেকে তুলে কিনারায় আনেন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার অনিয়মের কারণে অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে। দ্রুত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সোমবার রাতে আমতলী উপজেলার চন্দ্রা আউয়ালনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর ওপর চন্দ্রা আউয়ালনগর এলাকায় আয়রণ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করে। ওই সেতুর নির্মাণ কাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা কাজ করে সেতুটি নির্মাণ করেছেন। নিম্নমানের ভিম ও অ্যাঙ্গল দেওয়ায় নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের ভিম নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার মানুষ চলাচল করে আসছেন।
গত বছর ২২ জুন একই খালে একই ঠিকাদার নির্মিত হলদিয়াহাট সেতুর উপরে ১৬ জন বরযাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস পারাপারের সময় সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ওই সময় ১০ জন যাত্রী নিহত হয়; কিন্তু প্রকৌশলী বিভাগ ও প্রশাসন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, চাওড়া ইউনিয়ন পাড়ের সেতুর দুই-তৃতীয়াংশ ভেঙে নদীতে পড়ে আছে আর হলদিয়া ইউনিয়নের অংশ দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় নাশির হাওলাদার বলেন, রাতে ডাকাডাকির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সেতু ভেঙে অটোগাড়ি নদীতে পড়ে গেছে। পরে অটোগাড়ি ও যাত্রীদের কিনারে তুলে আনি।
তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণকালেই ঠিকাদার অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সেতু নড়বড়ে হয়ে যায়। এ সেতুতে কয়েকবার মেরামত করেছে কিন্তু কাজে আসেনি। ১৮ বছরের মাথায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু এভাবে ভেঙে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
দুলাল প্যাদা ও জালাল মীর বলেন, সেতুটির দুই-তৃতীয়াংশ ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। অটোগাড়ি ও যাত্রীদের তেমন সমস্যা হয়নি। সেতু না থাকায় দুই ইউনিয়নের মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। দ্রুত এখানে গাডার সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
এ দুর্ঘটনায় আহত মিরাজ সিপাহী বলেন, গাড়িটি সেতুর মাঝ বরাবর আসামাত্রই ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। কেননা গত ৫ আগস্ট থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আগেই গাড়ি পারাপারে সকর্তীকরণ নোটিশ এবং পিলার গেড়ে দেওয়া ছিল।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, সেতুর নির্মাণকালেই ঠিকাদার অনিয়ম করেছেন। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, গত বছর ওই সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু স্থানীয়রা তা না মেনে সেতুতে গাড়ি নিয়ে ওঠায় এমন অবস্থা হয়েছে। তারপরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।