বসত ঘরে নিজের কবর নিজেই জীবিত অবস্থায় তৈরি করে রেখেছেন ভৈরবের সুফি সাধক সিদ্দিক শাহ সরেশ্বরী। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সিদ্দিক শাহ উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের কামারকান্দা এলাকার মৃত আলাই মিয়ার ছেলে। এক সময় নিজ এলাকায় মুদিব্যবসা করতেন। সেই সময় থেকেই তিনি মাজার অনুসারী হন। এরপর থেকেই তার পির বাবার অনুসারী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের কামারকান্দা এলাকায় নিজ বসত বাড়ির একটি টিনের ঘরের ভিতরে নিজের কবর নিজেই তৈরি করে রেখেছেন। চারদিক থেকে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গার ভেতরে কবরটি তৈরি করা হয়েছে। কবরের চারপাশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি করে ভেতরে ফাঁকা রাখা হয়েছে। উপরদিকে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। গত দুই মাস আগে তিনি অসুস্থ হওয়ার পর কারো সাহায্য ছাড়া নিজেই তৈরি করেছেন এ কবর।

এ সময় কথা হয় ভৈরবের সুফি সাধক সিদ্দিক শাহ সরেশ্বরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৮ বছর আগে রংপুর বুড়িহাট এলাকার বাবা সুদরুল শাহের কাছে আমি মুরিদ হই। তিনি আমার গুরু বাবা। দীর্ঘদিন যাবত আমার বাবার খেদমত করার পর তিনি আমাকে বয়াত দান করেছেন। তারপর থেকে আমার কিছু ভক্ত-অনুসারী তৈরি হয়েছে। বাবার আশীর্বাদে সিলেটের সুনামগঞ্জ, ঢাকা, নিজ এলাকাসহ ২৫-৩০ জনের বেশি ভক্ত রয়েছেন।

তিনি বলেন, কবর খোঁড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে দুনিয়ার সব মানবজাতিকেই তো মাটির তৈরি কবরে যেতে হবে। তাই আমি নিজের কবর নিজেই তৈরি করে রেখেছি। যে কবরে আমি পরকালে  থাকব, সেই কবরটি নিজ হাতে বানালাম; যা আমার ভক্তরাও দেখতে পারল। তারা আমাকে মৃত্যুর পর এই ঘরেই দাফন করবেন।

তার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমাদের পারিবারিকভাবে সবার সম্মতি নিয়েই আমার স্বামী নিজের কবর নিজে তৈরি করেছেন। তার  অসিয়ত নিজের হাতে গড়া কবরেই তাকে দাফন করতে বলা হয়েছে। আমরা তার ইচ্ছাকেই সমর্থন দিয়েছি।

স্থানীয় শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, লোকমুখে শুনেছি আমার ইউনিয়নে সিদ্দিক শাহ নামের এক মাজারভক্ত লোক আছে। তিনি নিজের কবর নিজেই তৈরি করে রেখেছেন। আসলে এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে প্রচলন নেই। এ বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।

এ বিষয়ে ভৈরব এলএসডি জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর আগে তার  কবরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা ইসলামে নিষেধ নেই; কিন্তু কবর আগেই বাঁধাই করা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে কেউ যদি মৃত্যুর পূর্বে নিজের কবরস্থান নির্ধারণ করে নিজেই তৈরি করে রাখেন, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আবার কেউ যদি মনে করেন তার পরিবারে কবর খোঁড়ার কেউ নেই তাহলে নিজের কবর নিজে তৈরি করে রাখতে পারেন।