মাসুদের বিরুদ্ধে ওএমএসের পণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০২ পিএম

টাঙ্গাইলে ওএমএসের চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, খাদ্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ওএমএসের পণ্য কলোবাজারে বিক্রি করছে ডিলার পলাশ আল মাসুদ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, শহরের আদালত পাড়ার কেয়া হলের মোড়ে মাসুদের দোকান।
সেখানে ওএমএসের পন্য বিক্রি করা হয়। আটা ও চালের জন্য মাসুদের দোকানে গেলেও তাদের ফেরত
পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
সোমবার সকালে যুগান্তরের এ প্রতিবেদক মাসুদের দোকানে যান। সেখানে গিয়ে
নিম্ন আয়ের বেশ কয়েকজন দেখেন তিনি। এ সময় কথা হয় হুনুফা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে।
তিনি জানান, আটার জন্য গিয়েও তা পাননি তিনি।
সেখানে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ইসমাইল মিয়ার সঙ্গে। এ বৃদ্ধ জানান, ১৪ বস্তা
আটা থাকার পরও বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল
হোসেন তাকে ঘুরিয়ে দেন। তাকে ওই নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, আজকে চাল আটা শেষ হয়েছে। আগামীকাল
৯ টার পরে আসবেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তাদের ওপরে চড়াও হন ইসমাইল হোসেন।
সোনা মিয়া বলেন, ‘প্রথম আটা দিতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে সাংবাদিকদের
সহযোগিতায় আমি আটা পেয়েছি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা
মির্জাপুরে সহকারি উপখাদ্য পরিদর্শক সোহেল
রানা ও নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেনের সহযোগিতায় ডিলার মাসুদের বিক্রয়কর্মীরা কালোবাজারে
চাল আটা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিক্রয় খাতায় ক্রেতাদের স্বাক্ষর নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করছে না তারা। কালোবাজারে পণ্য
বিক্রির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কথিত নাম উল্লেখ করে নিজেরাই টিপসই দেয় তারা।
আদালত পাড়ার রিকশা চালক আয়নাল মিয়া বলেন, ‘গত তিন মাসে দুবার আটার জন্য
ডিলার মাসুদের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়েছি। তবে প্রতিবারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। চাল-আটা
থাকলেও তারা না করে দিয়ে সেগুলো কালো বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তদারকির দায়িত্বে থাকারা
মাসুদকে সহযোগিতা করেন।’
নাসিমা বেগম নামের এক গৃহবধু বলেন, ‘আমাদের মতো গরীব মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে
থেকেও চাল-আটা পাই না। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লাইনে না থেকেও আটা সংগ্রহ করেন। সরকার
আমাদের জন্য ন্যায্য মূল্যে চাল-আটার ব্যবস্থা করলেও সেগুলো আমাদের ভাগ্যে জুটে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ডিলার মাসুদ আওয়ামী
লীগের প্রভাবশালী নেতা। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আগে কালোবাজারি করত। এখন খাদ্য অফিসের লোকদের
ম্যানেজ করে এসব করছে। এ ডিলার প্রতিদিন ২০ বস্তা আটা বরাদ্দ পেলেও সর্বোচ্চ আট বস্তা
বিক্রি করে। বাকি সব মিল থেকে বিক্রি করে চলে আসেন।’
বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আজাদ খন্দকার বলেন, ‘আমরা কালোবাজারে
চাল-আটা বিক্রি করি না।’ পরে এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে কয়েক বার ফোন করেন তিনি।
নিরাপত্তা প্রহরি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি ডিলারের লোক না। প্রথমে আটার
কথা না করলেও পরে তাদের আটা তো দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে উপখাদ্য পরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, ‘আমি আজ দায়িত্বে
ছিলাম না। ইসমাইল দায়িত্বে ছিলেন। আমি কালোবাজারের সঙ্গে জড়িত না।’ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে
আলাদা বসে কথা বলার অফার করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মো. মুসা বলেন, আটা থাকতে না করার কোনো
সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।