মোবাইল ফোনের আলোতে চলছে অস্ত্রোপচার

এটি এম সামসুজ্জোহা, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম

সরকারি হাসপাতালটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। অপারেশন থিয়েটারের লাইটগুলো বেশ পুরনো। অস্ত্রোপচারের সময় আলো নিয়ে বেগ পোহাতে হয় চিকিৎসকদের। বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোনের টর্চের আলোর সহায়তা নিতে হয় অস্ত্রোপচারের সময়। বিষয়টি স্বীকারও করছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও সুরাহা হয়নি। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের।
জেলায় সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল
হাসপাতালে প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য রোগী আসেন। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে
৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি থাকেন, বিশেষ করে সার্জারি ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
পর্যাপ্ত অপারেশন থিয়েটার না থাকায় রোগীদের সপ্তাহে দুই-একদিন ভাগ করে সার্জারি করা
হয়। ফলে সার্জারির জন্য একজন রোগীকে পাঁচ থেকে সাতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বলেও
জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শুধু গাইনি বাদ দিয়ে সার্জারি, ইএনটি
মিলিয়ে মাসে প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০টি অপারেশন করা হয়। ওই সূত্র আরও জানায়, অপারেশন থিয়েটারে
ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত তিনটি অটোক্লেভ মেশিনের মধ্যে দুটিই নষ্ট
হয়ে আছে। একটি সচল থাকলেও সেটিও যেকোনো মুহূর্তে খারাপ হয়ে যেতে পারে। এমনটি হলে অপারেশন
থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাকিবুল হাসান চয়ন বলেন, ‘অস্ত্রোপচারে
ব্যবহৃত লাইট প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো। এতে পর্যাপ্ত আলো দেয় না। ফলে মোবাইলের
আলোও ব্যবহার করতে হয়, যা অস্ত্রোপচারে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, অস্ত্রোপচারের
সময় অপারেশন টেবিলটিও নিচে নেমে যায়, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপারেশন থিয়েটারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো
হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’
১৪ বছর ধরে হাসপাতালটিতে কাজ করা জ্যৈষ্ঠ নার্স হামিদা খাতুন বলেন,
‘আমি আসার পর থেকে দেখছি লাইটের সমস্যা। স্বল্প আলো দিয়ে অপারেশন করছেন চিকিৎসকেরা।’
গাইনি অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ রহিমা খাতুন বলেন, ‘অনেকদিন ধরে দুই
নাম্বার অপারেশন থিয়েটারে আলোর স্বল্পতা রয়েছে। এতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সমস্যার
মধ্যে পড়তে হয়।’
অপারেশন থিয়েটারে সরঞ্জাম নিয়ে সমস্যা রয়েছে এমন কথা শুনে ভয়ে আছেন রোগী
এবং তাদের স্বজনেরা। তবে উপায় না পেয়ে হাসপাতালটিতে আসতে হচ্ছে তাদের। জামিরুল হাসান
নামের এক রিকশা চালক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই।
তাই এই হাসপাতালে অপারেশন করাতে এসেছি। এসে এখন শুনছি, এখানের যন্ত্রপাতি খারাপ।’
হাসান আলী নামের এক রোগী জানান, তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু
হাসপাতালের অবস্থা দেখে তিনি ভয় পাচ্ছেন।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান কনসালটেন্ট শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার
বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ঝুঁকি রয়েছে। অপারেশন কক্ষে যেসব সরঞ্জাম
আছে তা অনেক পুরোনো। আধুনিক সরঞ্জাম চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হলে
এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা,ফিরোজ জামান বলেন,
‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম
না। আপনার কাছে শুনলাম। দ্রুতই সদস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’