-67ae15a4edae6.jpg)
বগুড়ার গাবতলীর মহিষাবান দেবোত্তর মধ্যপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বউমেলা সম্পন্ন হয়েছে। মেলায় পুরুষ ক্রেতাদের প্রবেশাধিকার না থাকায় বিভিন্ন বয়সের নারীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দের পণ্য কেনাকাটা করেছেন। শিশুরা নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে ওঠে আনন্দ করেছে।
এলাকার প্রবীণরা জানান, সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরসংলগ্ন ইছামতি নদীর তীরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে দীর্ঘ প্রায় চারশ বছর ধরে পোড়াদহ মেলা বসে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে ওই এলাকায় বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে মাছ, মিষ্টি, আবসাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনাবেচা করে থাকেন। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ ও মিষ্টান্ন। মেলায় অন্তত ২৫ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে।
এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ঈদে দাওয়াত না দিলেও অসুবিধা নেই; কিন্তু এ মেলায় দাওয়াত করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিটি বাড়ি মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনিসহ আত্মীয়স্বজনে ভরপুর।
তাদের মেলার মাছ, মিষ্টি, গোশতসহ বিভিন্ন খাবার ও শীতের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আবার দাওয়াত পাওয়া জামাইরা মেলা থেকে সেরা মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে যান। মেলা একদিনের হলেও এর রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী।
এদিকে পোড়াদহ মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার মহিষাবান দেবোত্তরপাড়া গ্রামে একদিনের বউমেলার আয়োজন করা হয়। গত প্রায় ২৫ বছর ধরে স্বল্পপরিসরে এ মেলা বসে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান আড়ৎদারের নেতৃত্বে বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। তার মৃত্যুর পর অন্যরা মেলায় নেতৃত্ব দেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পোড়াদহ মেলার জন্য লাইসেন্স দিলেও বউমেলার কোনো লাইসেন্স বা অনুমোদন লাগে না। মেলায় কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার না থাকায় বিভিন্ন বয়সের নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙিয়ে পরসা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও তার সঙ্গে স্থান পায় ছোটদের খেলনা আর গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ভিড় জমাতে শুরু করেন নারী ও শিশুরা।
বউমেলায় কেনাকাটা ও দেখতে আসা গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার বাঁশহাটা গ্রামের কলেজছাত্রী আরেফা খাতুন, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী গ্রামের রেমী বানু, গৃহবধূ লতিফা খানম, সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের শিল্পী খাতুন ও গাবতলীর বালিয়াদীঘি গ্রামের গৃহবধূ উম্মে কুলছুম বেগম জানান, বউমেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করেছি।
গাবতলী উপজেলার সোনাকানিয়া গ্রামের গৃহবধূ রানী আক্তার জানান, আমরা প্রতি বছরই এ মেলায় এসে কেনাকাটা করে থাকি। নিজের জন্য চুড়ি, লিপস্টিক, নেইলপলিস, পাতিল, কড়াই ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে রুশনীর জন্য চুড়ি, ফিতা, ক্লিপ ও আলতা কিনেছেন। মেলার কারণে তাদের বাড়িতেও স্বজনরা এসে ভরে গেছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে যেন উৎসব চলছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা মেলায় বিভিন্ন ধরনের শতাধিক দোকান বসে। প্রতি বছর মহিষাবান গ্রাম ছাড়াও রানীরপাড়ায় বউমেলা বসে। তবে এবার রানীরপাড়ায় মেলার আয়োজন করা হয়নি। বিভিন্ন বয়সের নারীরা পছন্দের কসমেটিক্স ও ঘরের তৈজসপত্র কিনেছেন। আর শিশুরা নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খেলা উপভোগ করে।
এবারের বউমেলার আয়োজক গাবতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমান সুমন জানান, ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারো বউমেলা বসানো হয়েছে।
গাবতলী থানার ওসি আশিক ইকবাল জানান, পোড়াদহ জামাই মেলার পরদিন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বউমেলা হয়ে আসছে। স্থানীয়রা এই ঐতিহ্য ধরে রাখছেন। মেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।