Logo
Logo
×

সারাদেশ

ধনীদের নামেও টিসিবির কার্ড!

Icon

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

ধনীদের নামেও টিসিবির কার্ড!

২ লাখ ৮ হাজার ৯৫০ জন টিসিবি কার্ডধারীর নাম খাতায় উঠলেও এই তালিকাটি স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি করা হয়। তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ধনাঢ্য ও দালান বাড়ির মালিক- এমন ব্যক্তিদের নামে টিসিবির সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

গাইবান্ধারর সাত উপজেলায় টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লেনদেনের এমন অভিযোগ এখন মানুষের মুখে মুখে। 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখার কাগজপত্র অনুযায়ী, জেলার ফুলছড়িতে ১৪ হাজার ৮৭৬ জন, সাঘাটা উপজেলায় ২১ হাজার ৬২৫ জন, সাদুল্যাপুর উপজেলায় ২৪ হাজার ৮০৪ জন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৩৯ হাজার ৭২ জন, পলাশবাড়ি উপজেলায় ২৮ হাজার ৮৮৭ জন ও গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩৮ হাজার ৭৫৭ জন, ৭ উপজেলা ও ৪ পৌরসভাসহ মোট ২ লাখ ৮ হাজার ৯৫০ জনের নামে টিসিবির কার্ড চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

এর মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার জনের কার্ড হাতে পেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তারা শিগগিরই টিসিবির সুযোগ সুবিধা পেতে যাচ্ছেন; কিন্তু টিসিবি কার্ডের নামের তালিকা তৈরি ও বিতরণ নিয়ে মানুষের যে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। 

যারা টিসিবির সুযোগ-সুবিধা পেতে যাচ্ছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে। ফলে কার্ড সুবিধা থেকে বাদ পড়েনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, চেয়ারম্যান মেম্বারের আত্মীয়-স্বজন, পৌর চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের সহযোগী ও আত্মীয়-স্বজনরা।  

গাইবান্ধা শহরসহ গ্রামাঞ্চলের ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও বাদ যায়নি। বিশেষ করে জানা গেছে, গাইবান্ধা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ড খুঁজলেও টিসিবির পণ্য নেওয়ার মতো প্রকৃত ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

কিন্তু গাইবান্ধা পৌর এলাকার মধ্যপাড়া, মাস্টারপাড়া, ভি এইড রোড এলাকার শতাধিক বিল্ডিং ও স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়েছে টিসিবির পণ্য কেনার সুবিধায়। এসব এলাকায় বাস করেন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। কার্ড দিলে ভোট পাওয়া যাবে এই আশায় পৌর কাউন্সিলররা কৌশলে যারা বড় ব্যবসায়ী এমন কি দুইতলা বাড়ির মালিককেও টিসিবি কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। 

ভোট বাড়াতে পৌর কাউন্সিলর শহিদ তার এলাকার কোনো ধনী লোকের নাম বাদ দেননি। টিসিবির কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে ভোটের চিন্তা মাথায় রেখে নাম সিলেকশন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গৃহিনী আর ক্ষুদ্র ব্যবসা দেখিয়ে গাইবান্ধা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে যাদের কার্ড দেওয়া হয়েছে তাদের নাম ব্যবহার করলেও তাদের কোনো দিন টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তারা বাড়ির চাকর অথবা ভাড়াটে লোক দিয়ে টিসিবির তেল চিনি ও ডালসহ অন্যান্য পণ্যের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। 

অন্যদিকে যারা টিসিবির কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত তাদের ধারেকাছেও যায়নি। গাইবান্ধা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ২ হাজার ৬৮৮ জন গৃহিণী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর নামে টিসিবির কার্ড দেওয়া হলেও এসব পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের দাবি বঞ্চিত মানুষের। 

গাইবান্ধা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এরশাদুল হোসেন বিপু জানান, কখন কে কার নামে টিসিবির কার্ড পেয়েছে বা নাম দিয়েছে, তা আমরা জানতেও পারিনি। যারা চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের ডান হাত বাম হাত তারা ধনাঢ্য হলেও তাদের ঘরেও টিসিবির পণ্য পৌঁছেছে। 

তিনি বলেন, যারা কার্ড পাওয়ার যোগ্য তারা কার্ড পায়নি। শুধু তাই নয়, গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা, পলাশবাড়ি পৌরসভা ও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় সুবিধাভোগীদেরও একই চিত্র। অন্যদিকে টিসিবির কার্ডের সুবিধাভোগীদের নাম সংশোধন ও সংযোজন করার নামেও টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। 

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ জানান, টিসিবির কার্ড বিতরণে যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে, তার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম