স্কুলের টাকায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২১ পিএম

নেত্রকোনার মদনে আওয়ামী মহিলা লীগ নেত্রী আয়েশা আক্তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিদ্যালয়ের তহবিলের টাকায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার বড় ভাই লে. কর্নেল শাহজাহান উদ্দিন ভূঁইয়ার ম্যুরাল তৈরি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার নোয়গাঁও আফতাব হোসেন একাডেমিতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, আয়েশা আক্তার আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বাংলাদেশ সৈনিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি লে. কর্নেল শাহজাহান উদ্দিন ভূঁইয়ার ছোট বোন।
তিনি নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, নেত্রকোনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য, উপজেলা শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা শাখার মহিলা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী মহিলা লীগ নেত্রী আয়েশা আক্তার নোয়গাঁও আফতাব হোসেন একাডেমিতে ২০০৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। এরপর তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর তার পদ চলে যায়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, আয়েশা আক্তার নিজ ক্ষমতা বলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হন। তার বড় ভাই লে. কর্নেল প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা থাকায় তিনি এলাকার কাউকে পরোয়ানা করতেন না। উনার পছন্দ অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্য নিতেন। তার কাজে সমর্থন না থাকলে ওই সদস্যকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হতো বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার ম্যুরাল নির্মাণে বিদ্যালয়ের টাকা ব্যয় করতে হবে- এমন কোনো প্রজ্ঞাপন সরকার জারি না করলেও আওয়ামী লীগের এই নেত্রী প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে এসব ম্যুরাল স্থাপন করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্রজনতা এ দুটি ম্যুরাল ভেঙে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী যুগান্তরকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দুটি ম্যুারাল নির্মাণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানে কোনো সরকারি নীতিমালা কিংবা প্রজ্ঞাপন ছিল কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, না এ বিষয়ে সরকারি কোনো নীতিমালা বা প্রজ্ঞাপন ছিল না।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও মহিলা লীগ কেন্দ্রিয় নেত্রী আয়েশা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দুটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের টাকা ব্যয় করেই এসব করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী জানান, প্রতিষ্ঠানে ম্যুরাল তৈরি করার সরকারি কোনো নীতিমালা, কোনো প্রজ্ঞাপন ছিল না। উনারা কিভাবে এসব তৈরি করেছেন তাও আমার জানা নেই। তবে বিদ্যালয়ের উৎস থেকে যদি করে থাকে, যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যালয়ে ম্যুরাল তৈরি করতে হবে- আমার জানামতে এমন কোনো নীতিমালা নেই। তবে তারা কিভাবে তৈরি করেছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। তারাই ভালো বলতে পারবেন।