জোড়া লাগানো শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে দিশেহারা বাবা-মা

কাজী সোহেল, নবাবগঞ্জ
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম

তিনটি মেয়ে সন্তান। তাই একটি ছেলে সন্তানের আশায় চতুর্থ সন্তান নেন মোহাম্মদ সেলিম মিয়া ও সাথী আক্তার দম্পতি। কিন্তু ছেলের আশায় নেওয়া সন্তানও হলো মেয়ে তাও আবার প্রতিবন্ধী বা বিকৃত আকৃতির। এতে চিন্তার শেষ থাকে না বাবা-মায়ের।
‘এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’- তেমনি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার দোহার উপজেলার অরঙ্গবাদ গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম মিয়া ও সাথী আক্তারের জীবনে।
২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর তাদের ঘর আলো করে আসে দুই মেয়ে শিশু সন্তান খাদিজা ও সুমাইয়া। তবে সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। জানতে পারেন শিশু দুইটি কোমরের অংশটুকু জোড়া লাগানো। এরপর কেটে গেছে সাড়ে ৩ বছর। জন্মের পর থেকে শিশু দুইটিকে আলাদা করতে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন বাবা মা। অর্থাভাবে এখন চিকিৎসা করাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
খাদিজা ও সুমাইয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সাভার সুপার ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় খাদিজা ও সুমাইয়ার। কোমরের অংশে জোড়া লাগানোর অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশু দুইটিকে ২২ দিন আইসিইউতে রাখতে হয়। পরবর্তীতে তাদের ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলে প্রায় ১ বছর। এরপর একাধারে ১৮ মাস চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১১ মাস যাবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশু দুইটি।
খাদিজা-সুমাইয়ার বাবা মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানান, চিকিৎসক বলেছেন- অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খাদিজা ও সুমাইয়াকে আলাদা করা যাবে। এ পর্যন্ত ওদের চিকিৎসা করতে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। শিশু দুটির জন্য দেশের বাহিরের ওষুধ আনতে হয় নিয়মিত। শিশু দুটিকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে আরও ৬টি অপারেশনের প্রয়োজন। অপারেশন, ওষুধ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে আরও ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, আমি ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলাম; কিন্তু খাদিজা-সুমাইয়া জন্ম নেওয়ার পর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কাজ করতে পারছি না। ওদের চিকিৎসা করাতে করাতে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। নিজের জমানো টাকা, মানুষের দানের টাকা, ব্যাংক ঋণ ও আত্মীয়দের থেকে ধার করা টাকায় এতদিন চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর উপায় নেই। জমি থাকলে বিক্রি করে হলেও চিকিৎসা করতাম; কিন্তু গ্রামের বাড়ি দোহারে ভিটেমাটি নদী ভাঙনে চলে গেছে। মানুষের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না, কিন্তু সন্তান দুটি তো বাঁচাতে হবে। তাই এখন নিরুপায় হয়ে প্রবাসী ও সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করছি।
খাদিজা-সুমাইয়ার মা সাথী বলেন, খাদিজা-সুমাইয়া অনেক চঞ্চল। অসুস্থ হলেও দুজন একসঙ্গে অসুস্থ হয়। মাসে চার-পাঁচবার জ্বর হয়। জন্মের পর থেকেই ঠাণ্ডাজনিত রোগ লেগেই আছে। জোড়া লাগানো শিশু জন্মানোয় মানুষের অনেক কটু কথা শুনতে হয়। আমি ওগুলোতে কান দেই না। আমি চাই খাদিজা-সুমাইয়া সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে আসুক। কিন্তু মানুষের সহযোগিতা না পেলে সন্তান দুটিকে বাঁচাতে পারব না। আশা করি সবাই আমার সন্তানদের বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন।
খাদিজা-সুমাইয়ার বাবা সেলিম মিয়া বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের সন্তানদের তেমন কোনো চিকিৎসা দিচ্ছে না। বর্তমানে ওদের অবস্থা বেশি ভালো না। এ অবস্থায় আমরা দেশের সরকার প্রধান ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে এসে আমাদের বাঁচানের আকুতি জানাচ্ছি। খাদিজা ও সুমাইয়ার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে পারেন: আইএফআইসি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর মোহাম্মদ সেলিম ০১৯০০৩৭১০৬৮১১।