Logo
Logo
×

সারাদেশ

এ যেন ইটভাটার স্বর্গরাজ্য!

এক ইউনিয়নেই ১৫ ইটভাটা, নীরব প্রশাসন

Icon

ময়মনসিংহ, দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৭ এএম

এক ইউনিয়নেই ১৫ ইটভাটা, নীরব প্রশাসন

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় রয়েছে ২৭টি অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে নিগুয়ারী ইউনিয়নেই রয়েছে ১৫টি। যার মধ্যে চারটি ভাটায় রয়েছে ৩০ ফুট উচ্চতার সনাতনী পদ্ধতির ড্রাম চিমনি। এতে হুমকিতে পড়েছে ইউনিয়নটির পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো চালানো হচ্ছে। অনুমোদন নেই কোনোটির। তবে ইটভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

নিগুয়ারী ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, পাতলাশী বাজার থেকে কুরচাই বকুলতলা বাজারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ৯টি ইটভাটা। ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাশাপাশি ইটভাটাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। লোকালয়, বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০ থেকে ৫০০ গজের মধ্যে ইটভাটাগুলোর অবস্থান।

নিগুয়ারী ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রামে দুই শতাধিক গাছের বাগান কেটে চলতি বছরে করা হয়েছে এমএমবি নামের একটি ইটভাটা। ফিসারি প্রজেক্ট ও ফসলি জমির মাঝখানে ইটভাটা স্থাপনের সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শুরুতেই বাঁধা দেওয়া হয়। ড্রাম চিমনির এ ইটভাটা যাতে চালু না হয় সে জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে কুরচাই গ্রামের মাসুদ শেখ (৩৫) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বরাবর লিখিত আবেদন করেন। কিন্ত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক সম্মতিতে ইটভাটাটি চালু করা হয়।

এমএমবি ইটভাটার ম্যানেজার হাদিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা চালু করা হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন এখানে আসেন না।

নিগুয়ারি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আরিফ রব্বানী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন ছাড়া নতুন ইটভাটা কীভাবে চালু হলো, তা আমি জানি না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার ২৭ ইটভাটার মধ্যে একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। সেগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ের নিকটে গড়ে উঠা এসব ইটভাটায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

উপজেলার প্রায় সবগুলো ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। তবে এসব ভাটার সামনে স্বল্প পরিমাণ কয়লাও দেখা গেছে, যা অত্যন্ত নিন্মমানের। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে স্বল্প উচ্চতার টিন দিয়ে তৈরি চিমনি থেকে বের হচ্ছে ঘন মেঘের মত কালো ধোঁয়া। এতে করে গাছপালা ক্রমে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। উজাড় হচ্ছে উপজেলার বৃক্ষ সম্পদ।

কুরচাই গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া (৪৪) বলেন, ‘ইটভাটার জন্য আমাদের ফসল উৎপাদন কমে গেছে। মাছ  উৎপাদনেও ভাটা পড়েছে। গাছে আগের মতো ফল আসে না। গ্রামের অনেকেই শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগতেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, চলতি মৌসুমের শুরুতেই ‘প্রশাসন সমস্যা করবে না’ এই নিশ্চয়তা দিয়ে ইটভাটাগুলো হতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা করে আদায় করা হয়। ইটভাটার একাধিক মালিক নাম না প্রকাশ শর্তে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এলআর ফান্ডের নামে এই টাকা আদায় করেন।’

এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, তিনি গফরগাঁওয়ের এ অফিসে ৯ বছর ধরে কর্মরত। প্রতি বছরই ইটভাটা থেকে এলআর ফান্ডের নামে কমবেশি টাকা আদায় করা হয় বলে জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অফিসের উপপরিচালক মো. মেজ-বাবুল আলম জানান, ‘অভিযান চালিয়ে উপজেলার ড্রাম চিমনির ইটভাটাগুলো দ্রুতই ভেঙে ফেলা হবে।’ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য এলআর ফান্ডের নামে ইটভাটাগুলো থেকে চাঁদা আদায় বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন,‘অন্য ডিপার্টমেন্টর বিষয়ে আমাদের কথা না বলাই ভালো।’

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভি করেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম