স্কুলের দুই শিশু ছাত্রকে পেটালেন ছাত্রীর বাবা

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম

স্কুলের দুই শিশু ছাত্র ফেরদৌস ফাহিম ও মোকছেদুল ইসলাম রাব্বিকে শিশু ছাত্রী টুম্পার বাবা মো. রাসেল গাজী বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত দুই ছাত্রকে স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল ১০টার দিকে আমতলী উপজেলার চলাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এ ঘটনায় ছাত্র মোকছেদুলের বাবা মহসিন হাওলাদার ওই দিন দুপুরে আমতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, রোববার বিকালে উপজেলার চলাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছুটির পরে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ফেরদৌস ফাহিম, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মোকছেদুল ইসলাম রাব্বি, আরাফাত ও সাইমা আক্তার টুম্মা দুষ্টুমি করছিল। ওই সময় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এ বিষয়টি সাইমা আক্তার টুম্পা তার বাবা রাসেল গাজীকে জানায়।
এ ঘটনার জের ধরে সোমবার বেলা ১০টার দিকে টুম্পার বাবা রাসেল গাজী বিদ্যালয়ে এসে ফেরদৌস ফাহিম ও মোকছেদুলকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তিনি দুই ছাত্রকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেছেন। দুই ছাত্রকে রক্ষায় শিক্ষক শহীদুল ইসলাম এগিয়ে এলে তাকেও অভিভাবক রাসেল গালাগাল করেছেন।
খবর পেয়ে দুই ছাত্রের অভিভাবকরা তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। ওই হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্র মোকছেদুলের বাবা মহসিন হাওলাদার অভিভাবক রাসেল গাজীসহ দুজনের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই টুম্পার বাবা রাসেল গাজী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইয়ালহান ও রাসেদুল ইসলাম জানায়, স্কুল থেকে টুম্পার বাবা রাসেল গাজী ছাত্র ফাহিম ও রাব্বিকে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। শহীদুল স্যার তাদের রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাকেও টুম্পার বাবা গালাগাল করেছেন।
আহত ছাত্র ফেরদৌস ফাহিম ও মোকছেদুল ইসলাম রাব্বি জানায়, গতকাল বিদ্যালয় ছুটির পরে আমরা বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমাদের সঙ্গে টুম্পার কথা কাটাকাটি হয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে টুম্পার বাবা আমাদের বিদ্যালয় থেকে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। আমরা এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।
দুই স্কুলছাত্রের মা তানিয়া আক্তার ও আসমা বেগম বলেন, আমার ছেলেরা যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে শিক্ষকরা বিচার করতে পারতেন। শিক্ষকরা যদি বিচার করতে না পারতেন, তাহলে আমরা বিচার করতাম কিন্তু কেন আমার ছেলেদের আরেক ছাত্রীর বাবা মারধর করেছেন? আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, দুই ছাত্রকে টুম্পার বাবা রাসেল গাজী মারধর করছিল। আমি তাকে নিষেধ করলে আমাকেও তিনি গালাগাল করেছেন।
স্কুলছাত্রী সাইমা আক্তার টুম্পার বাবা রাসেল গাজী মোবাইল ফোনে বলেন, আমার মেয়েকে কটূক্তি করায় ওদের কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মেরেছি।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, দুই ছাত্রকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এক ছাত্রের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।