দুমকিতে জাল সনদে আ.লীগ নেতার স্ত্রীর চাকরি

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম

পটুয়াখালীর দুমকিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও আজিজ আহম্মেদ কলেজের হিসাবরক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক ফরিদ আহমেদের স্ত্রী নাহিদ আক্তারের জাল সনদে চাকরি নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের টাকা আজও জমা হয়নি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।
জানা গেছে, তিনি ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর উপজেলার মুরাদিয়া বশির উদ্দিন আলিম মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) পদে আবেদন করেন। সে লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বরে বাছাই কমিটি ও ২৩ ডিসেম্বরে কার্যনির্বাহী কমিটি নিয়োগপত্র ইস্যু করলে ওই দিনই (২৩ ডিসেম্বর) যোগদান করেন। ২০১০ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা পেতে থাকেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল পরিদর্শন নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দেব দুলাল ভট্টাচার্য এবং শিক্ষা পরিদর্শক মো. আবদুস সালাম সরেজমিন মাদ্রাসা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করলে এনটিআরসির সনদটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য এনটিআরসিএতে পাঠানো হলে ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ও ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে সনদটি সঠিক নয় (উত্তীর্ণ রোলধারী অন্য ব্যক্তি) মর্মে একটি পত্র ইস্যু করেন এবং উক্ত সনদধারীর বিরুদ্ধে আইনতগত ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ মর্মে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নাহিদ আক্তার লিটিকে বিভিন্ন সময়ে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পত্র পাঠালেও তা গ্রহণ না করায় কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত এসেছে মর্মে জানা গেছে ।
বিষয়টি অবগত হলে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি নাহিদ আক্তার লিটি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ চার জনকে বিবাদী করে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই রিট পিটিশন নম্বর ১৫১৫৬/২০১৬ তারিখ-১৭/০১/২০১৭। দীর্ঘ সময় পরে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও উল্লেখিত ওই পত্রটিতে তারিখ ছিল ২০ আগস্ট ২০২০ খ্রি.। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণ করেনি মর্মে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। অভিযুক্ত নাহিদ আক্তার লিটি অবৈধ ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের পাঁচ লাখ পঁচানব্বই হাজার চারশত তেরো টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পত্র দাখিল করার নির্দেশ দেন সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাদের।
এ বিষয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুর রব গত ২ সেপ্টেম্বর পুনরায় রেজিস্ট্রি ডাকযোগ পত্র প্রেরণ করলেও তিনি (নাহিদ আক্তার লিটি) গ্রহণ না করায় তা ফেরত এসেছে।
জানা গেছে, নাহিদ আক্তার লিটির স্বামী ফরিদ আহমেদ উপজেলার আজিজ আহম্মেদ কলেজের এইচএসসি (বিএমটি) শাখার হিসাবরক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক ও মুরাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া জাল সনদে চাকরি দেন তার স্ত্রী নাহিদ আক্তার লিটিকে। এছাড়া তিনি দলের প্রভাব খাটিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কলেজে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতেন। ক্লাস না করে কলেজে এসে স্বাক্ষর করে চলে যেতেন।
কলেজের অধ্যক্ষ এসব বিষয়ে কথা বললে নানা ধরনের হুমকি ধমকিসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান আহসানুল হক। এছাড়াও জুলাই বিপ্লবকালে (ছাত্র-জনতার আন্দোলন) ছাত্রজনতাকে বাধাসহ মারমুখী অবস্থানে ফরিদ আহমেদকে দেখা গেছে; যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ বরাবর চাকুরিচ্যুত করার ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দাখিল করেন শিক্ষক কর্মচারীরা।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নিং বডি সাময়িক বরখাস্ত করেন ওই শিক্ষককে। এ বিষয়ে কলেজ গভর্নিং বডি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। বর্তমানে তিনি (ফরিদ আহমেদ) সাময়িক বরখাস্ত হলেও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত নাহিদ আক্তার লিটির ব্যক্তিগত নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
আজিজ আহম্মেদ কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রভাষক ফরিদ আহমেদ জানান, কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তার দাবি তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উত্তর মুরাদিয়া বশিরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুর রব জানান, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশন করে আত্মসাতের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নাহিদ আক্তার লিটিকে পত্র পাঠানো হলেও তিনি তা ফেরত পাঠিয়েছেন। তার স্বামী কিছু দিন সময় চেয়েছেন। ওই টাকা জমা না দিলে প্রাতিষ্ঠানিক মামলা দায়ের করা হবে।
আজিজ আহম্মেদ কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি (অ্যাডহক) নাসরিন জাহান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ফরিদ আহমেদ প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে থাকা মূল্যবান কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ দাখিল করছেন। এ কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।