বগুড়া যুবদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা রাখার অভিযোগ
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
ফাইল ছবি
বগুড়ায় সদ্য ঘোষিত জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০ জনের অধিক নেতাকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় কমিটি মঙ্গলবার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণার পর এসব অভিযোগ উঠলে বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশার সৃষ্টি হয়। তারা এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান দাবি করেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। যাদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগ বলা হচ্ছে তারা দীর্ঘদিন তাদের সংগঠনের সঙ্গে রয়েছেন। প্রতিপক্ষ ও বঞ্চিতরা পদ-বাণিজ্যের মিথ্যাচার করছেন। বিগত দিনে এরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সেলফি ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা যুবদলে পদ পাওয়া আওয়ামী ঘরোনার নেতাদের কয়েকজন হলেন- সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সুজাউল ইসলাম সুজা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. ইনসান, তথ্য প্রযুক্তি যোগাযোগ ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল ইসলাম, মৎস্য ও পশুপালন বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এবং সহকর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা। এছাড়া সহসাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব সেলিম, সহকোষাধ্যক্ষ সম্পাদক আল মাহমুদ প্রিন্স ও সহআইন বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদুল হাসান জিতুকে হাইব্রিড নেতা হিসেবে অখ্যায়িত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে সুজাউল ইসলাম সুজা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে। তথ্য প্রযুক্তি যোগাযোগ ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল ইসলামকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আহমেদুর রহমান বিপ্লবের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায়। মৎস্য ও পশু পালন বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফাকে জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দলীয় নানা কর্মসূচিতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. ইনসানকে দেখা যায়- বগুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিনের সঙ্গে। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানাকেও আওয়ামী লীগ নেতা রবিনের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়।
সদ্য ঘোষিত বগুড়া জেলা যুবদলের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে স্থান পাওয়া ও সাবেক কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, নতুন ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে রাখা হয়েছে। বিগত দিনে এরা যুবদলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি। অথচ তাদের হঠাৎ করে জেলা যুবদলে পদ দেওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, যুবদলের দায়িত্বশীল নেতারা টাকার বিনিময়ে পদবাণিজ্য করেছেন। ফ্যাসিবাদের দোসরদের যুবদলে পদ দেওয়া হয়েছে। ‘বগুড়া জেলা বিএনপি নিউজ’ নামে ফেসবুক পেজে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে যেসব নেতাদের হাইব্রিড ও অন্য দল থেকে আসার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারা দৃঢতার সঙ্গে দাবি করেন, তারা কখনো আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে ছিলেন না। তাই তাদের জেলা যুবদলে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. ইনসান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। তবে ওষুধ ব্যবসার সুবাধে বগুড়া জেলা ড্রাগ সমিতির সাবেক সভাপতি, শহর আওয়ামী লীগ সভা রফি নেওয়াজ খান রবিনের সঙ্গে সমিতির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছবি দিয়ে তাকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া হাইব্রিড বলে অখ্যায়িত করা আহসান হাবিব সেলিম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেছেন। পরে যুবদলে এসেছেন।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান দাবি করেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। পদবঞ্চিতরা টাকা নিয়ে আওয়ামী ঘরানোর লোকজনকে জেলা যুবদলে পদ দেওয়ার ব্যাপারে মিথ্যাচার করছেন। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত হলে উপযুক্ত প্রমাণ দেওয়া হবে।