Logo
Logo
×

সারাদেশ

আন্দোলনে গুলিতে আহত আগৈলঝাড়ার হাসানের খবর রাখছে না কেউ

Icon

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম

আন্দোলনে গুলিতে আহত আগৈলঝাড়ার হাসানের খবর রাখছে না কেউ

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের প্রতিহার গ্রামের মানিক সরদারের ৩ সন্তানের মধ্যে বড় হাসান সরদার। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পরিবারের হাল ধরেন। রাজধানী ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তার আয়েই চলত ৪ সদস্যের পরিবার। তিনিই কলেজ পড়ুয়া ভাই ও বোনের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার পর প্রথম ১৮ জুলাই রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ডান পায়ে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হন তিনি। এরপর গ্রামে এসে চিকিৎসা নিয়ে আবারো যোগ দেন গণঅভ্যুত্থানে। 

সর্বশেষ ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে পুলিশের চালানো ছররা গুলিতে ডান হাত ও বুকে গুরুতর আহত হলে অচেতন হয়ে পড়েন। 

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর আফতাবনগর নাগরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে মুগদা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে তাকে ভর্তি না নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। 

এরপর ৬ আগস্ট কুর্মিটোলা হাসপাতালে গেলে তারা আবারও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠায়। ৭ আগস্ট ভর্তি নেয় পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করার জন্য দুইবার অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলে জখম গুরুতর হওয়ায় অপারেশন করেননি চিকিৎসকরা। এভাবেই পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাটে আড়াই মাস। 

তাকে দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে সাক্ষাৎ হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। এরপর থেরাপি নেওয়ার জন্য পাঠানো হয় সিআরপিতে। 

জুলাই আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত বরিশালের আগৈলঝাড়ার হাসান সরদারের খবর রাখছে না কেউ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ৫ আগস্ট পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করলেও বর্তমানে চিকিৎসা হচ্ছে না। 

উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে তা আর হয়ে উঠেনি। ৫ মাস অতিবাহিত হলেও শরীরে ৪ শতাধিক গুলি স্প্রিন্টার নিয়ে  যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ২১ বছরের এই যুবক। 

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় ৪ সদস্যর পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। অর্থাভাবে বন্ধ হওয়ার পথে ভাই ও বোনের লেখাপড়া। 

হাসান সরদার জানান, দেশের স্বার্থে নিজের পরিবার ও জীবনের কথা চিন্তা না করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ডান হাতের সব রগ নষ্ট হয়ে যায় তার। 

তিনি বলেন, পঙ্গুত্ববরণ করে এখনও শরীরে ৪ শতাধিক গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শুধুমাত্র জুলাই ফাইন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা পেলেও সেই টাকা শেষ হওয়ার পর এখন চিকিৎসা চলছে ধার-দেনা করে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় ৪ সদস্যর পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। অর্থভাবে বন্ধ হওয়ার পথে ভাই ও বোনের লেখাপড়া।

আহত হাসান সরদারের মা নুরনাহার বেগম বলেন, ছেলের উন্নত চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তাসহ যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের কাছে একটা চাকরির দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা।   

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকারিভাবে তৈরি করা আহতদের তালিকায় হাসান সরদার তালিকাভুক্ত একজন আহত ব্যক্তি। ইতোমধ্যে তাকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের যারা গুরুতর আহত রয়েছেন, তাদের আগামী মাসে জুলাই ফাইন্ডেশন থেকে আবারও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া এদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম