চট্টগ্রামের কুখ্যাত সোনা চোরাকারবারি আবু ঢাকায় গ্রেফতার

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮ এএম

চট্টগ্রামের কুখ্যাত সোনা চোরাকারবারি ফটিকছড়ির আবু আহমেদ (৫৭) ওরফে সোনা আবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে তাকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করা হলেও সোমবার তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরব আমিরাত পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
ডবলমুরিং থানার ওসি রফিক আহমদ আবুকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের দায়ের করা একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সোনা আবুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সোনা আবু ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের ফয়েজ আহমদের ছেলে। নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হিলভিও আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের নিরিবিলি আবাসিক এলাকায় তার বাসা।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আবু এক সময় নিজ এলাকা ফটিকছড়িতে ঝালমুড়ি ও সিগারেট বিক্রি করতেন। ১৯৯১ সালে শ্রমিক হিসেবে ভিসা নিয়ে দুবাই পাড়ি জমান জীবিকার তাগিদে। কিন্তু সেখানেই তিনি পেয়ে যান সোনা চোরাচালান চক্রের সন্ধান। চক্রের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি প্রায়ই দেশে আসা-যাওয়া করতেন। সোনার বার নিয়ে আসার পাশাপাশি পরবর্তীতে তিনি হুন্ডি ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েন। এভাবে তিনি দুই দশকে বনে যান হাজার কোটি টাকার মালিক।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমান বন্দরে প্রায় সোনার চালান আটক হলে আবুর নাম আসত। কিন্তু কে সেই আবু তার হদিস পেতনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে আবু নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকায় তার বাসার সামনে থেকে অপহৃত হন। কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তিনি ছাড়া পান বলে তার ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে জানা যায়। এই ঘটনায় মামলা ২০১৪ সালে মামলা দায়ের করা হলে ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই অপহরণের রহস্য বের করতে গিয়েই পুলিশ আবুর সোনা চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যের সন্ধান পায়।
সূত্র জানায়, ওই বছরই ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ১০৫ কেজি ও ৫২৫ পিস সোনার বার উদ্ধারের দু’টি ঘটনা ঘটে। ৬১ কেজি স্বর্ণের একটি চালান ধরা পড়ে ঢাকার নয়া পল্টন এলাকায়। মূলত এই তিনটি চালানের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ে আবুর নাম। তার নামে পৃথক মামলাও দায়ের হয়।
মূলত তখন থেকেই পুলিশের তালিকায় বাংলাদেশে সোনা চোরাকারবারের অন্যতম গডফাদার হিসেবে তার নাম উঠে আসে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকা থেকে ২৫০ টি স্বর্ণের বার ও নগদ ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের আলোচিত এসপি বাবুল আক্তার এই সোনার চালান উদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগ আছে এই সোনা চোরকারবারি করেই দেশে-বিদেশে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যান আবু। সিআইডির তদন্তে এই আবুর নামে-বেনামে ৭২১ কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য বের হয়ে আসে। ১৭ টি অ্যাকাউন্টে ৪০০ কোটি টাকার তথ্যও বের করে সিআইডি।
২০২৩ সালে একবার শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও পরে কৌশল ও জালজালিয়াতি করে তিনি বের হয়ে যান। বিগত সরকারের আইনমন্ত্রীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে আবু অনেকটাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরও আবু নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছিলেন। তবে রোববার দেশত্যাগ করার সময় আর শেষ রক্ষা হয়নি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।