রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মিনু
জুলাই অভ্যুত্থানে যুগান্তর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, জনমত গঠনে দৈনিক যুগান্তর অদ্বিতীয়। জুলাই অভ্যুত্থানে যুগান্তর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকারের পতনে যুগান্তর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের সংকট, সমস্যা, সীমাবদ্ধতা আর সম্ভাবনার বিষয়গুলো পাঠকের কাছে কোনো সংকোচ ছাড়া দ্ব্যর্থহীনভাবে উপস্থাপন করেছে। এ কারণে যুগান্তর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। পাঠকপ্রিয় সংবাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
রাজশাহীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঠক সমাদৃত সংবাদপত্র দৈনিক যুগান্তরের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিনু এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার বেলা ১১টায় মহানগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভার শুরুতেই যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান, যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়া উপস্থিত সবাই যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান আনু মোস্তফার সুস্থতা কামনা করেন।
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, একটি জাতি তখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে যখন গণমাধ্যম জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশার বিষয়গুলো বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করে। গত সতেরো বছর বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জেল, জুলুম, হুলিয়া, নির্যাতন, হামলা আর মামলা মোকাবিলা করেই রাজপথে থেকেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আশা করব, অতীতের ন্যায় যুগান্তর মজলুম আর নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে। এটিই এ গণমাধ্যমটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা। ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যুগান্তর পরিবারের সদস্যদের আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
মিনু আরও বলেন, যেকোনো ধরনের দস্যুতা, ভূমি দখলকারী এবং যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে যুগান্তরের সংবাদ প্রকাশের ধারা অব্যাহত থাকবে। সেখানে যদি আমিও ভুল করি, আমারও সমালোচনা করবেন। এদেশ কারো একার নয়, আমাদের সবার এই দেশ। আমরা সবাই মিলে সম্ভাবনাময় এ মাতৃভূমিকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়তে চাই। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে খুব অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রত্যাশিত ভূমিকা আরও জোরালো হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের রাজশাহী মহানগর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন। তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর এ দেশের মানুষের অধিকার একটি দল ও পরিবার হরণ করে রেখেছিল। সাধারণ মানুষ কথা বলার সুযোগ পায়নি। ফ্যাসিবাদ গণমাধ্যমকেও গ্রাস করেছিল। সত্য উপস্থাপনে গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমকর্মী সত্য তুলে ধরার জন্য চরম নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জেল খেটেছেন। দেশের মাটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি। পরিবার ছেড়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, যুগান্তর অসঙ্গতি তুলে ধরে সমাজকে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য যে ভূমিকা পালন করেছে ভবিষ্যতেও সে ধারা অব্যাহত রাখবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো বিভেদ চাই না। আমরা সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একাট্রা হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ব।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানান, যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার তানজিমুল হক। যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নুরুল ইসলামকে স্মরণ করে স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ আর তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই যুগান্তর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবে যমুনা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান যমুনা টেলিভিশন এবং যুগান্তর পত্রিকা জনগণের পক্ষে অবিচল থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিনির্মাণে নুরুল ইসলামের দেখানো পথেই আমরা চলতে চাই। আর লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা যুগান্তরের কর্মীরা আরও নিরলসভাবে কাজ করে যাব। যুাগন্তরের পাঠকপ্রিয়তা ধরে রাখতে আমরা পিছপা হব না। এটিই আমাদের সংকল্প।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দৈনিক আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক রিমন রহমান, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি শরিফুল ইসলাম তোতা, সাধারণ সম্পাদক সামাদ খান, যমুনা টেলিভিশনের রাজশাহী ব্যুরোর রিপোর্টার তারেক মাহমুদ, সিনিয়র ভিডিও জার্নালিস্ট রাসেল মাহমুদ, যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরোর ফটোসাংবাদিক আজম খান, বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ইরফান তামিমসহ রাজশাহীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।