চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না ভোজ্যতেল

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৯ এএম

চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের সংকট কাটেনি। চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ মিলছে না। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে একাধিক সিন্ডিকেট ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খুচরা থেকে পাইকারি বাজার, কোথাও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের জন্য হাহাকার চলছে। পাইকারি বাজার থেকে ভোজ্যতেল হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতা। বাজারটিতে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। লিটারপ্রতি দাম ৮ টাকা বাড়ানো হলেও বাজারে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কিছুটা কমেছে শীতকালিন সবজির দাম। মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোজ্যতেলের বাজার এখন পুরোপুরি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিকভাবে বাজার চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ হচ্ছে না। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও অনেক কোম্পানি তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সরবরাহ পাচ্ছেন না। ১০০ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ লিটার। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, মিল মালিকরা নাকি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে তেলের সংকট চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন রমজানে ভোজ্যতেলের সংকট সমগ্র বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে।
ব্যবসায়ীরা আগের মতো চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করছেন না। এ ছাড়া ভোজ্যতেল নিয়ে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারাও বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দামও হু হু করে বাড়ছে। সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল পাচ্ছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলার সংকট এখনো চলমান রয়েছে। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড ছুঁয়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু কোম্পানি শর্তসাপেক্ষে তেল বিক্রি করছে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, যা এতদিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
ভোজ্যতেলের আড়তদার কামরুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারে ফের পণ্যটির দাম বৃদ্ধির জন্য গেল ৬ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য নানামুখী চাপের মুখে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলেও সরবরাহ স্বাভাবিক করেননি মিল মালিকরা। এখনো সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রাখছেন তারা। এ কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।
বাজারদর : চট্টগ্রামে মাছের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে লটে মাছ ২০০ থেকে ২১০ টাকা, রূপচাঁদা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছোট ইলিশ ৭০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি ও বড় ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে চাষের শিং আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছ আকারভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়, বড় চিংড়ি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, চাষের কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি কেজি ২৯০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরু ও মহিষের মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দামের আলু বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা দরে। সবজির মধ্যে কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, শসা, টমেটোর দাম ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, করলা ৪০, মটরশুঁটি ৭০, গাজর ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ ও লাউ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের মধ্যে লাল শাক, লাউ শাক, মুলা শাক, পালং শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক ১০ থেকে ২০ টাকায় আঁটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।