ডা. মুকতাদির স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন শনিবার
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে ক্রায়ো এক্সট্রাক্টর মেশিন আবিষ্কার করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. একেএমএ মুকতাদির।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ যন্ত্রসহ তার আবিষ্কৃত চক্ষু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১৩টি যন্ত্র উদ্ভাবনের ৪৫ বছর পর সর্বসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে।
তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ও তার সহধর্মিণী ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় ২০০৪ সালে নিজগ্রাম নয়াপাড়ায় এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
ডা. মুকতাদিরের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্রসহ গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্মৃতি জাদুঘর। এর উদ্বোধন করবেন তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকা ডা. মাহমুদা খাতুন। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনী ও স্ত্রী রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন ইউএনও এম সাজ্জাদুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইকবাল আহমেদ নাসের ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মাযহারুর আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ডা. একেএমএ মুকতাদির। তার তৈরি যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে অপথালমোস্কাপ, রেটিনোস্কোপ, ডিসিআর বোন ট্রিফাইন, কেপ্নটোপ্লাস্টি করনিয়াল ট্রিফাইন, হ্যান্ড হেল্ড সাইনোপটোফোর, পাংটাম ডাইলেটর, ল্যাক্রিমাল গ্রোব, রিভলজি ডিশন চার্ট, ট্রায়াল ফ্রেম, আইপিডি মাপার যন্ত্র।
১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে তিনি এসব যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। এর মধ্যে ক্রায়ো এক্সট্রাক্টর যন্ত্রটি ১৯৬২ সালে ডা. চারিস ক্যালমেন প্রথম আবিষ্কার করেন। তখন এ যন্ত্রটির দাম ছিলো ৬ লাখ টাকা। যা এদেশের চিকিৎসকদের কিনে ব্যবহার করা অসম্ভব ছিল।
ডা. একেএমএ মুকতাদির বলেন, আমি সেই যন্ত্রটি দেখলাম, ব্যবহার করলাম। এর পর ৩ মাসের পরিশ্রমে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে সেই যন্ত্রটি তৈরি করেছি; যা তরুণ ডাক্তাররা মাত্র ১ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন।
তিনি বলেন, সেটি ছিল ১৯৭৯ সাল। যন্ত্রটি তখন বিএসটিতে পেটেন্ট করি। এ নিয়ে ওএসবি জার্নালে আমার প্রথম পাবলিকেশন প্রকাশিত হয়। এ প্রযুক্তিটি ১৯৮৩ সালে জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেই। এতে শুধু দেশ নয়, বিভিন্ন দেশের চক্ষু চিকিৎসকরাও উপকৃত হন।
স্মৃতি জাদুঘরে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হয়েছে- গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ‘হুঁকা ও পানদানী’ দিয়ে। রয়েছে নানা সময়ের চশমা, মোমদানী, হারিকেন, কুপিবাতি, কলেরগান (গ্রামোফোন), হেফাকবাতি, করোসিন স্টোব, রেডিও, টেপ রেকর্ডার, হারমোনিয়াম, হাওয়াইয়ান গিটার, তবলা, টেলিফোন, ফ্যাক্স মেশিন, ট্রানজিস্টর ও কেসেটপ্লেয়ার, সাদা-কালো টিভি, টাইপ রাইটার, ভিসিআর ও ক্যাসেট, তারবিহীন ইন্টারকম, সিডি প্লেয়ার, ডিভিডি প্লেয়ার ইত্যাদি।
এছাড়া ৪৭ বছরের প্রকাশিত সংবাদপত্রের কাটিংয়ে দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিবেদনসহ ১৯টি সংবাদ স্থান পেয়েছে। সর্বসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে স্বাধীনতা পদক, ডা. মুকতাদিররের ব্যবহৃত স্বর্ণের, রূপার ও পিতলের কোটপিন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অর্ধশত কোর্টপিন। এ স্মৃতি জাদুঘরে নবপ্রজন্মকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত করতে ৬২টি দেশের মুদ্রা রাখা হয়েছে।
চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২০ সালে দেশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পদক পান। দেশে গ্রামীণ এলাকায় চোখের চিকিৎসায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের বিলাসপুরে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া অফথালমোজিক্যাল সোসাইটি এর সম্মেলনে ‘গুরু পুজান’ পদক অর্জন করেন।
২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর তিনি ভারতের তিরুচিরাপল্লীতে অ্যাসোসিয়েশন অব কমিউনিটি অফথ্যালমলোজি ইন ইন্ডিয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাওয়ার্ড, ২০০২ সালে লায়ন্স এফ্রিসিওয়ান অ্যাওয়ার্ড, ২০০৫ সালে এএফএও কর্তৃক ডিসটিংগোয়িং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, একেদাস অ্যান্ডওমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০১৫ সালে ভারতে গোল্ডমেডেলসহ দেশ ও বিদেশে ১৯টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।