Logo
Logo
×

সারাদেশ

বরিশালে আইনজীবী সমিতির ভোট

বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত—‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত—‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’

ফাইল ছবি

বরিশালে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার নিজ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গে লড়াই করতে হবে বিএনপিকে। মঙ্গলবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ধার্য থাকা এই নির্বাচন ইতোমধ্যেই বর্জন করেছে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ। নির্বাচিত কমিটি সরিয়ে সমিতি কার্যালয় দখলের অভিযোগ তুলে বাম ধারার আইনজীবীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদও তাদের সঙ্গে রয়েছে।

আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কমিটি ছিল আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৩ দিন আগেই হঠাৎ আগের নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেন সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। নির্বাচনে জোর করে ফলাফল ছিনিয়ে নিয়ে তাদের পরাজিত করা হয়েছিল বলে তাদের দাবি। সাধারণ আইনজীবীদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেতৃত্বের বদল হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাদিকুর রহমান লিংকন। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান মোর্শেদ বলেন, ‘এটা ভয় দেখিয়ে জোরজবরদস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রে এ ধরনের সভা আহ্বান বা কমিটি বাতিলের কোনো বিধান নেই। সমিতির দুইশ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।’

নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করা এই কমিটি এখন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোট। তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদসহ বামপন্থি আইনজীবীরা। সমিতির সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ নেতা অ্যাড. আফজালুল করিম বলেন, ‘ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে নির্বাচিত কমিটি হটিয়ে সমিতি কার্যালয় দখল করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী কোনো আইনজীবী এই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আমরা ভোট দিতেও যাব না।’ আওয়ামী ও বামপন্থি আইনজীবীদের বর্জনে সহজেই জিতবে বিএনপি, এমন ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। 

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক নেতা বলেন, ‘শুরু থেকেই ছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসার মতো প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা। সেই সঙ্গে ব্যাপক প্রচেষ্টাও চালান ফোরামের নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। বিএনপিরই একাধিক আইনজীবী নেতা প্রার্থী হয়েছেন ফোরামের বিরুদ্ধে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো জামায়াতও দিয়েছে প্রার্থী। এখন ঘরে-বাইরে দুদিকেই লড়তে হবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থীদের।’

নির্বাচন উপপরিষদের তথ্যানুযায়ী, সভাপতি পদে ফোরামের প্রার্থী সাদিকুর রহমান লিংকনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা মুজিবর রহমান নান্টু এবং আলী হায়দার বাবুল। এই পদে অবশ্য কোনো প্রার্থী দেয়নি জামায়াত। 

ফোরামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা প্রসঙ্গে অ্যাড. নান্টু বলেন, ‘কথা ছিল পিপি জিপি পদে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। কিন্তু সেই কথা মানা হয়নি। আমরা যারা নির্যাতিত অথচ কোনো সুবিধা নেইনি তারা তাহলে যাব কোথায়?’ আরেক প্রার্থী আলী হায়দার বাবুল বলেন, ‘মামলা, জেল, নির্যাতন সহ্য করা আইনজীবীদের এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে কাদের আইনজীবীরা ভালোবাসেন সেটা প্রমাণের সময় এসেছে।’

সাধারণ সম্পাদক পদে ফোরামের প্রার্থী মির্জা মো. রিয়াজ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের মো. সালাহউদ্দিন মাসুম এবং বিএনপির মো. আজাদ হোসাইন। সহসভাপতির দুটি পদে অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ফোরামের অসীম কুমার বাড়ৈ ও মো. তারিকুল ইসলাম। অর্থ সম্পাদক পদে ফোরামের মো. আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে লড়বেন জামায়াতের মো. ফরিদ উদ্দিন। যুগ্ম সম্পাদকের দুটি পদে প্রার্থী হয়েছেন ফোরামের বিউটি সুলতানা, আব্দুর রহমান চোকদার এবং জামায়াতের মো. মনির হোসেন ও মো. রুহুল আমীন খায়ের। 

এছাড়া নির্বাহী সদস্যের ৪টি পদেও ফোরামের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ ভোটে আছেন জামায়াতের মো. রিয়াজুল হক। 

নিজ দলের বিদ্রোহী ও জামায়াত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রশ্নে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাড. মহসীন মন্টু বলেন, ‘বিএনপি’র যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহুভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না আসেন। কিন্তু তারা তা শোনেননি। এখন আমরা বিষয়টি কেন্দ্রকে জানাব। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।’ 

জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগেরবার তাদের ৩টি পদে ছাড় দিয়েছিলাম আমরা। এবারও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়নি। তারপরও ফোরাম পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’ 

জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সালাহউদ্দিন মাসুম বলেন, ‘সাধারণ আইনজীবীরা এখন নেতৃত্বের গুণগত মানের পরিবর্তন চায়। সৎ লোকের নেতৃত্ব চায়। আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। বাকি সিদ্ধান্ত দেবেন আইনজীবীরা।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম