
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় দুটি সরকারি পুকুরেরপাড় ভরাট করে দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। পুকুর দুটি তিন বছরের জন্য একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ইজারা দিয়েছিল উপজেলা ভূমি প্রশাসন বা এসিল্যান্ড অফিস।
এখন পুকুরের পাশের জমির মালিক হাবিল হোসেন, কাবিল হোসেন ও মজিবর রহমান নামের তিন ভাই সরকারি এই দুটি পুকুর পাড়ে মাটি ফেলে নিজেদের জমির পরিধি বাড়াচ্ছেন। প্রশাসন জেনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অবশেষে রোববার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম একজন তহসিলদারকে পুকুর দুটি পরিদর্শনে মাঠে পাঠান। রোববার বিকালে ফের মাটি ফেলে পুকুর দুটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
আলোচিত পুকুর দুটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চাতরাপুকুর গ্রামের ৭৭ নম্বর পারুলিয়া মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। ৩৮৬ নম্বর দাগের পুকুরটির আয়তন ১ দশমিক ৪৯ একর বা প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা। এই পুকুরটির নাম চাতরাপুকুর। আর ৩৯১ দাগে আরেকটি পুকুরের আয়তন শূন্য দশমিক ৬১ একর বা দুই বিঘা।
পুকুর দুটির পাড়ে বাসুদেবপুর গ্রামের হাবিল, কাবিল ও মজিবর রহমানের জমি। সম্পর্কে তারা আপন তিন ভাই। তিন ভাইয়ের বাড়ি বাসুদেবপুর গ্রামে।
জানা গেছে, পুকুর দুটি চাতরাপুকুর গ্রামে অবস্থিত। বড় পুকুরটির নামানুসারেই এই গ্রামের নামকরণ। ছোট পুকুরটির নাম তেতোসাল্লা। ইজারা গ্রহীতা একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করছেন আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি মাছ চাষি।
স্থানীয়রা বলছেন, সারেংপুর গ্রামের কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তিন ভাইয়ের হয়ে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে পুকুর দুটি ভরাটের দায়িত্ব নিয়েছেন। সেভাবেই সরকারি পুকুর দুটি ভরাট হচ্ছে। সরকারি পুকুর বিধায় কেউ কাউকে বাধাও দিচ্ছে না। ভূমি প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই পুকুর দুটি ভরাট করে দখল হচ্ছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।
পুকুর দুটির মাছচাষি আবদুস সামাদ বলছেন, গত কয়েক দিনে চাতরাপুকুরের এক পাড়ের অন্তত ১০ ফুট করে জায়গায় দখল করে মাটি ফেলে ভরাট হয়েছে। আর তেতোসাল্লা পুকুরের তিন পাড় তিনদিক থেকে ভরাট করা হচ্ছে। সবদিকেই পুকুরের পানির মধ্যে প্রায় ১০ ফুট করে মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এভাবে পুকুর দুটি ভরাট করা হলে সব মাছই মারা যাবে। তার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। অন্যদিকে সরকারি পুকুর দুটি আর দখলমুক্ত করা যাবে না।
শনিবার সরেজমিন চাতরাপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দুপাশে দুটি পুকুরের অবস্থান। মাঝখানে তিন ভাইয়ের জমি। মাঝের জমিটির পরিধি বাড়াতে দুপাশে দুটি পুকুরের পাড়েই মাটিভরাট করা হচ্ছে। ছোট পুকুরটির পূর্ব এবং উত্তরপ্রান্তের পাড়েও মাটি ফেলা হচ্ছে।
মাছচাষি আবদুস সামাদ আরও বলেন, পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে দেখে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তিনি কয়েক দফা ফোন করেন; কিন্তু কর্মকর্তারা গুরুত্ব দেননি। গত বৃহস্পতিবার তার ভাই আবদুল মাতিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। তারপরও কয়েক দিন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের ভূমিকা বেশ রহস্যজনক।
রোববার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম একজন তহসিলদারকে পুকুর দুটি পরিদর্শনে মাঠে তিনি জমি পরিমাপ না করেই ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি চলে যাওয়ার পরই ওই তিন ভাই বাঁশ কাটা শুরু করেন। পানিতে বাঁশ পুঁতে সেখানে আরও মাটি ফেলার প্রস্তুতি শুরু করেন। রোববার বিকালে আবারও মাটি ফেলে পুকুর দুটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিল হোসেন দাবি করেন, পুকুরেরপাড় ভেঙে ধীরে ধীরে তাদের অনেক জমি পুকুরে নেমে গেছে। যে পরিমাণ জমি নেমেছে, এখনো পুরোটা ‘উদ্ধার’ করতে পারেননি, সেজন্য বাঁশ পুঁতেছেন। আরও ১০ ফুট পর্যন্ত পুকুরেরপাড় তারা দখল নিতে চান।
এ বিষয়ে তারা ভূমি অফিসকে জানিয়েছিলেন কিনা- জানতে চাইলে হাবিল বলেন, আমাদের জায়গা আমরা উদ্ধার করছি। কাউকে জানানোর দরকার নেই।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম বলেন, এক ইঞ্চি সরকারি জমিও তারা দখল করতে পারবে না। আমি তহসিলদারকে পাঠিয়েছিলাম। কী দেখেছেন সেটা এখনো জানি না। আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব। খাস পুকুরে মাটি ফেলা হলে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের জায়গা উদ্ধার করা হবে।