Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাওনা টাকা চাওয়ায় চাঁদাবাজি মামলার আসামি স্কুলশিক্ষক!

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম

পাওনা টাকা চাওয়ায় চাঁদাবাজি মামলার আসামি স্কুলশিক্ষক!

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো চাঁদাবাজি মামলার আসামি হলেন এক স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। মিথ্যা মামলার হয়রানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।

খুটাখালী কিশলয় আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের সিনিয়র শিক্ষক আবু তাহের জানান, ২০২২ সালে খুটাখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়া এলাকার মৃত সোলতান আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুরকে পাইকারি মূল্যে মহিষ কেনার জন্য ১২ লাখ টাকা দেন। মহিষ বিক্রির লাভসহ সাড়ে ১২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার চুক্তি থাকলেও আবদু শুক্কুর পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে বাকি সাত লাখ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করেন।

পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় আবদু শুক্কুর খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ পেঠানের কাছে বিচার দেন। নুর মোহাম্মদ পেঠানের মধ্যস্থতায় আবদু শুক্কুর সাত লাখ টাকার একটি চেক এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। 

চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তার বসতভিটা বন্ধকি হিসেবে থাকবে।

পরবর্তী সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে আবদু শুক্কুর তার ভাইজি আইরিন সুলতানা রিমির সহযোগিতায় উল্টো আবু তাহেরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা খারিজ এবং তদন্ত প্রতিবেদন: মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার উপপুলিশ পরিদর্শক আল-ফুরকান বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে চাঁদাবাজির কোনো সত্যতা পাননি। তিনি পেনাল কোডের ২১১ ধারায় আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আদালত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন।

প্যানেল চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ পেঠান বলেন, আবদু শুক্কুর একসময় ব্যবসা করতেন। সেই সূত্রে আবু তাহের তাকে ১২ লাখ টাকা দেন। পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি সাত লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমি উভয়পক্ষের সমঝোতায় একটি চুক্তিপত্র করি। কিন্তু পরে শুক্কুর ও তার ভাইজি মিথ্যা মামলা দায়ের করে শিক্ষক আবু তাহেরকে হয়রানি করেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

স্থানীয় রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আবদু শুক্কুর ও তার ভাইজি আইরিন সুলতানা রিমি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছেন।

চকরিয়া মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনজুর আলম অভিযোগ করেন, এই চক্র আমার ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে সাজানো ধর্ষণ মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে জেল খাটায়।

আরেক ভুক্তভোগী ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ি এলাকার মো. কিবরিয়ার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সর্বস্বান্ত করেছে। আল্লাহ এই প্রতারক চক্রের বিচার করবেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবদু শুক্কুর ও আইরিন সুলতানা রিমি মাদক ব্যবসায়ও জড়িত। ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল চকরিয়া থানা পুলিশ খুটাখালী নদী থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীর দেওয়া জবানবন্দিতে তাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে।

আবু তাহের বলেন, মিথ্যা মামলার কারণে আমার মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং মিথ্যা অভিযোগকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

এ বিষয়ে জানতে চালে আইরিন সুলতানা রিমি সব দোষ অস্বীকার করে বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমি এখন বড় একটা কাজে বের হচ্ছি বলে ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম