হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত রংপুর অঞ্চলের মানুষ
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই হাড়কাঁপানো শীত আর হিম বাতাসের তীব্রতায় কাঁপছে রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের মানুষ। জবুথবু হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। বাদ যায়নি প্রাণিকুলও।
শীতের কারণে লোকসানে পড়েছে কৃষক ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো। ব্যাহত হচ্ছে ধানের চারাসহ অন্যান্য ফসলের বীজ রোপণ ও কৃষিকাজ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে আলুচাষিরা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এদিকে হঠাৎ এমন শীতের তীব্রতার কারণে বাড়ছে রোগবালাই, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধের ঘটনা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে দেখা দিয়েছে শীতবস্ত্রেও সংকটও।
বুধবার সরেজমিন রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার, জাহাজ কোম্পানি মোড়, ধাপ, মাহিগঞ্জ, মডার্ন, লালবাগ, তামপাট, দর্শনাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষজন শীতের তীব্রতার কারণে হাট-বাজারে বের হচ্ছে না। চায়ের দোকানগুলোতেও তেমন ভিড় নেই। শপিং মলসহ মহানগরীজুড়ে শীতের কারণে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। তবে শীতের পোশাকের দোকানগুলোতে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে কিছুটা পড়েছে শীতের প্রভাব। অনেকেই জড়ো হয়ে আগুন পোহাচ্ছেন শীত নিবারণের জন্য।
এদিকে মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই এমন হাড়কাঁপানো শীত আর হিম বাতাসের তীব্রতায় কাঁপছে রংপুর মহানগরী ও জেলার আট উপজেলা ছাড়াও এ অঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং নীলফামারী জেলার মানুষ। শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্ররা।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহণ চলছে ধীরগতিতে। কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
নগরীর সিও বাজার এলাকার কথা হয় রিকশাচালক সালাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন যেভাবে শীত ও কুয়াশা হচ্ছে। তাতে টিকে থাকায় মুশকিল। আমরা গরিব মানুষ তাই পেটের দায়ে গাড়ি চালাই। নইলে বাড়িতেই থাকতাম।
মডার্ন মোড় এলাকার আসাদুজ্জামান নয়ন ও মোখলেছুর রহমান নামের দুই পথচারী বলেন, শীতের তীব্রতার কারণে আমরা কাহিল। প্রয়োজনে বের হচ্ছি। তেমন শীতের কাপড়ও নেই।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিনিয়তই হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। গত এক মাসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন মারা গেছেন এবং ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুরে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ৪-৫ দিন শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, রংপুর মহানগরীসহ জেলায় ৩১ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং আরও কম্বল বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।