কেরানীগঞ্জে ৩ কোটি টাকার জমি জালিয়াতি করে বিক্রির চেষ্টা, নারী গ্রেফতার
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
প্রয়াত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমানের কেরানীগঞ্জে কেনা ২২ শতক জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টাকালে মুক্তা রহমান নামে (৩৩) এক নারী ধরা পড়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে চুনকুটিয়া এলাকায় কমিশনে দলিল করার সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদের বিচক্ষণতায় তিনি ধরা পড়ে যান। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কেরানী মোক্তার হোসেন বাদী হয়ে জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা করেছেন।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া মৌজায় ২২ শতক জমি কেনেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান। ওই জমিতে দীর্ঘদিন এই নামে সাইনবোর্ডও ছিল।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদ জানান, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, চুনকুটিয়া মৌজার ২২ শতক জমি ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমানের নামে কেনা হয়েছে। তিনি ২০১৫ সালে মারা যান। তার কোনো ওয়ারিশান না আসায় জনৈক জহিরুল ইসলাম ও গ্রেফতার মুক্তা রহমান প্রয়াত সেনা কর্মকর্তার ছেলেমেয়ে দাবি করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে নামজারি করেন। ওই বছরই (২০১৫) জহিরুল নিজের অংশ মুক্তা রহমানকে হেবা দলিল করে দিলে মুক্তা পুরো ২২ শতাংশের মালিক হয়ে যান।
এরপর ২০২২ সালে মুক্তা ওই জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে ৩ জনের নামে পাওয়ার দলিল করে দেন।
সাবরেজিস্ট্রার আরও জানান, মঙ্গলবার সেই পাওয়ার দলিল বাতিল করে মুক্তা নতুন একটি পাওয়ার দলিল (অন্য দুই গ্রহীতার নামে) কমিশনে করার জন্য সাবরেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পর মঙ্গলবার রাতে সাবরেজিস্ট্রার নিজেই চুনকুটিয়া এলাকার একটি অফিসে যান দলিল রেজিস্ট্রি করতে।
এ সময় তিনি কৌতুহলবশত মুক্তাকে তার ভাই জহিরুলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মুক্তা জানান, জহিরুল ১৬ বছর যাবত কানাডা থাকেন। ১৬ বছরে তিনি বাংলাদেশে আসেননি। এতে তার সন্দেহ হয়। জহিরুল ২০১৫ সালে ভাই হিসেবে তার জমি বোন মুক্তাকে হেবা করে দিলে সময়ের হিসেবে তা প্রায় ১০ বছর। অথচ মুক্তা বলছেন, তার ভাই ১৬ বছর ধরে কানাডায়। যিনি ১৬ ধরে কানাডায়, তিনি ১০ বছর আগে কিভাবে হেবা দলিল করেন? এমন প্রশ্নে মুক্তা ধরা পড়ে যান।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, প্রয়াত সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ও জহিরুল ইসলাম ভাইবোন সেজে ওই জমি তার নামে হেবা দলিল ও নামজারি করেন।
সাবরেজিস্ট্রার ইমরুল খোরশেদ জানান, জহিরুল ইসলাম ও মুক্তা ভুয়া উত্তরাধিকার সেজে জমি আত্মসাৎ করেছেন। সেনা কর্মকর্তার পরিবার বা কোনো ওয়ারিশান এ ব্যাপারে মামলা করতে পারবে। তবে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মুক্তা কর্তৃক সৃজিত পুরাতন পাওয়ার দলিলটি বাতিল করা হয়েছে। তারা যে নতুন করে পাওয়ার দলিল করতে চেয়েছে সেটি ভুয়া মালিকানা ধরে জালিয়াতির অভিযোগে মুক্তা রহমান ও দলিলের শনাক্তকারী ফিরোজের বিরুদ্ধে সরকার বাদী মামলা হয়েছে।