এক বছর ধরে ইউপির বেতন পাচ্ছেন না গ্রাম পুলিশের সদস্যরা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কর্মরত গ্রাম পুলিশের সদস্যরা গত এক বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অংশের বেতন পাচ্ছেন না, যা তাদের বেতনের অর্ধেক। এ ছাড়া গত ২৬ মাস ধরে পাচ্ছেন না হাজিরা ভাতাও। নিয়মিত কাজ করে বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন পেতে ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে।
গ্রাম পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীপাড়ের ১২ ইউপিতে ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ কাজ করে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিমাসে ছয় হাজার ৫০০ টাকা করে বেতন পাওয়ার কথা তাদের। তবে সারিয়াকান্দিতে কর্মরত গ্রাম পুলিশেরা শুধু সরকারি অংশের তিন হাজার ২৫০ টাকা পাচ্ছেন, যা আসে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে। বাকি তিন হাজার ২৫০ টাকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছর ধরে তারা তা পাচ্ছেন না।
এছাড়া সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার থানায় হাজিরা দিয়ে নিজ ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদন দিলে তাদের প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পাওয়ার কথা। সেটাও ইউপি থেকে পাচ্ছে না তারা।
উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ বুলবুলি রানী জানান, স্বামীর স্বল্প আয়ে তার সংসার ঠিকমত চলে না। তাই তিনি গ্রাম পুলিশে যোগ দেন। তবে সবশেষ এক বছর ধরে ইউপি থেকে বেতন পাচ্ছেন না। নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেও গত ২৬ মাস ধরে পাচ্ছেন না হাজিরা ভাতা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বুলবুলি রানী বলেন, ‘সব নিয়ম পালন করছি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে প্রতি মঙ্গলবার থানায় প্রতিবেদন দিয়ে আসছি। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি। টাকার অভাবে সন্তানদের ঠিকমতো পড়াতে পারছি না।’
সেকেন্দার আলী, মিজানুর রহমান, শাহজাহান আলীসহ আরও কয়েকজন গ্রাম পুলিশ সদস্য বলেন, বেতন-ভাতা ছাড়া আর কতদিন চলব। দিনমজুরও খাটতে যেতে পারছি না। বাড়িতে গেলে স্ত্রী ও সন্তানেরা বেতনের কথা জানতে চায়। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে চুপ করে থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চালুয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাম পুলিশদের পরিষদের অংশের বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এই বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এ ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেয় না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও কিছু কিছু করে বেতন দেওয়া হচ্ছে।’
সারিয়াকান্দির ইউএনও শাহারিয়ার রহমান বলেন, ‘গ্রাম পুলিশদের সরকারি অংশের বেতন চালু রয়েছে। বাকি বেতন পরিষদের আয় থেকে দেওয়া হয়। কিছু টাকা জমা হয়েছে। সেখান থেকে তারা তিন মাসের বেতন পাবে। আমরা পরিষদকে চাপ দিচ্ছি। এছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি। সরকারি বরাদ্দ পেলে তাদের হাজিরা ভাতা দেওয়া হবে।’