নেত্রকোনায় কৃষি কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে মারধর
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম
নেত্রকোনায় জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর এক কৃষি কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বুধবার দুপুরে শহরের বড়বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ওই কর্মকর্তার নাম আরিফ চৌধুরী। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার মেন্দিপুর এলাকায়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী, থানা-পুলিশ ও ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিবেশী শাকিল চৌধুরীর জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে আদালতে মামলা রয়েছে। আরিফ চৌধুরী প্রায় তিন বছর ধরে তার বাড়ির সামনে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) কর্তৃক সৌর সেচপাম্প বসিয়ে প্রায় ৩০ একর জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন।
গত ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন তার সেচ পাম্পের পাইপে সিমেন্ট, বালু ও সুরকির ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এতে করে বোরো খেতে সেচকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে আরিফ চৌধুরী খালিয়াজুরি থানা পুলিশের শরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি। সর্বশেষ গত রোববার তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাইপ মেরামতের নির্দেশ দেন। এতেও কাজ হয়নি। উল্টো প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হন।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে আরিফ চৌধুরী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারার একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হন। এ সময় শাকিল চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে শহরের বড়বাজার এলাকায় একটি ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দরজা বন্ধ করে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনে থেকে ১০-১২ জন যুবক মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে এগিয়ে এলে ওই উচ্ছৃঙ্খল যুবকেরা তাদের গালমন্দ করেন।
হামলার শিকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরী বলেন, প্রতিপক্ষ শাকিল চৌধুরীর নেতৃত্বে শাওন, বাদল, ছোটনসহ ১০-১২ জন আমাকে ডিসি অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে বড়বাজার এলাকায় একটি চেম্বারে বেধড়ক মারধর করে। আমার সাথে থাকা ২১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা আবার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এলে আমাকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে পুলিশের সামনেও মাথা দেয়ালে ঠুকিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাকিল চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, বড়বাজার এলাকায় একটি চেম্বার থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।