Logo
Logo
×

সারাদেশ

শিমার মেডিকেলে চান্স, শঙ্কায় দরিদ্র পরিবার

Icon

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩১ পিএম

শিমার মেডিকেলে চান্স, শঙ্কায় দরিদ্র পরিবার

অভাবের সংসার। অসুস্থ বাবার আয়-রোজগার না থাকায় স্বল্প আয়ের বড় ভাইদের ওপর নির্ভর পুরো পরিবার। যে কারণে বেতন-পরীক্ষা ফিসহ বিভিন্ন খরচ চালানো অসম্ভব হওয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। সকলের সহযোগিতায় গত বছর কোচিং করেও ভর্তির সুযোগ মেলেনি। তবুও থেমে যায়নি দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেধাবী শিমা আক্তার। জেদ ধরে মেডিকেলে পড়ার। তাই টাকার অভাবে পুনরায় কোচিং করতে না পারলেও এবার আর চেষ্টা বিফলে যায়নি তার। বাড়িতে বসে ভর্তি গাইড পড়ে সুযোগ করে নিয়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে। 

গত রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে সে। শত বাধা পেরিয়ে রূপকথার গল্পের মতো শিমার এ কৃতিত্বে খুশি শিক্ষক ও স্বজনরা।

শিমার পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি শিমার আগ্রহ ছিল। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করে সে। স্থানীয় চরপাগলা পাটওয়ারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ভর্তি হয় চরকালকিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৪.৮৯ জিপিএ নিয়ে ২০২১ সালে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু বাড়ি থেকে জেলা শহরের এ কলেজটি দূরে হওয়ায় ও আসা যাওয়ার ভাড়ার অভাবে নিয়মিত যাওয়া হতো না তার। তবুও সেখান থেকে ৪.৮৩ জিপিএ নিয়ে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে শিমা। 

ওই বছর চেষ্টা করেও মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য কোথায়ও ভর্তি না হয়ে এবার পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেয়। রোববার প্রকাশিত মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ৪৩১৬তম স্থান অর্জন করে সে।

জানা গেছে, পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে শিমা পঞ্চম। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালীয়া এলাকার দরিদ্র বাবা আলী আহাম্মদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় আয়-রোজগারহীন। বড় দুই ভাই মো. রিপন ও জাহাঙ্গীর আলমের স্বল্প আয়ে কোনো রকম চলছে তাদের সংসার। চরকালকিনি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে শিমার লেখাপড়া অনেকটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন শিক্ষকরা তাকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ালেখা করার সুযোগ দেন। এভাবেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা চলে তার। সেখান থেকে এসএসসি পাশের পর একই ধরনের সহযোগিতা পায় লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েও। সেখান থেকে এইচএসসি পাশের পর রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গেল বছর মেডিকেলে পড়ার সুযোগ করতে পারেনি সে। কিন্তু শিমার প্রবল ইচ্ছা মেডিকেলেই পড়ার। এ লক্ষে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি না হয়ে দ্বিতীয়বার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে সে। টাকার অভাবে এবার আর কোচিংয়ে ভর্তি হতে না পারায় বাড়িতে বসে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে।

শিমার মা আয়েশা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো শিমার। অনেক কষ্টের পরও মেয়ের এমন কৃতিত্বে তারা আনন্দিত। তবে এর মাঝে রয়েছে দুশ্চিন্তাও। কারণ, তার দুই ছেলে যে আয় করে তা দিয়ে সংসারের খরচ ও মেয়ের মেডিকেলের পড়াশোনার খরচ মেটানো অনেকটাই অসম্ভব।

শিমা আক্তার জানান, দারিদ্র্যতাকে জয় করা বিভিন্ন গুণীজনের জীবনী পড়ে সে অনুপ্রাণিত হয়। এটাকে ধারণ করেই সে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখে। প্রথমবার যখন সেই স্বপ্ন অধরা হয়ে পড়ে তখন মনে জেদ ধরে তার। ওই জেদই তাকে এখন স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছিয়েছে। এ সাফল্যের জন্য মা, ভাই ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্বপ্ন পূরণে সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।  

মেধাবী শিক্ষার্থী শিমার এমন সাফল্যে তার প্রতিবেশী সিনিয়র সাংবাদিক ও স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান মানিক জানান, ছোটবেলা থেকে শিমা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিল। শিমার পড়ালেখার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্ট করেছেন। আজ তাদের কষ্ট সার্থক হলেও তাদের বড় চিন্তা পারিবারিক অভাব-অনটন।

চরকালকিনি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বেলায়েত জানান, শিমা ওই বিদ্যালয়ে পড়ার সময় টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন মেধার কথা চিন্তা করে তার পড়ালেখার সমস্ত খরচ মওকুফ করা হয়েছিল। শিমার এ সাফল্যে তারা অত্যন্ত খুশি।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, পারিবারিক অভাব-অনটনে থাকা একটি পরিবারের সদস্য হয়েও শিমা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিমাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম