মেয়ে চান্স পেলেন মেডিকেলে, দুশ্চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
বরিশাল মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন ভ্যানচালকের মেয়ে আরিফা আক্তার। তিনি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের শেখ আসাদুজ্জামানের বড় মেয়ে। এদিকে মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভ্যানচালক বাবা।
নিজে অক্ষর জ্ঞানহীন হলেও দুই সন্তানকে নিয়ে বাগেরহাট শহরে ভাড়া বাড়িতে থেকে লেখাপড়া শেখাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ভ্যানচালক আসাদ।
মেডিকেলে মেধা তালিকায় ১৯৭১তম হয়ে এখন আর্থিক সমস্যার কারণে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন তিনি।
আরিফার বাবা আসাদুজ্জামান ভ্যান চালিয়ে আর মা হামিমা আক্তার হেমা বাসায় বসে সেলাইমেশিনে অন্যের কাপড় সেলাই করে অনেক কষ্টে সংসার চালান।
৬ বছর আগে দুই মেয়েকে নিয়ে প্রতাপপুর গ্রাম ছেড়ে বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়া এলাকায় টিনশেডের একটি বাড়িতে ওঠেন। ভাড়া বাড়িতে থেকে বড় মেয়ে আরিফা আক্তার ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া ছোট মেয়ের লেখাপড়া শেখাতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আসাদ।
আরিফা বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসিতে ৭ সাবজেক্টে পরীক্ষার পর পরীক্ষা বন্ধ হলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করে আরিফা আক্তার।
৪ বছর বয়সে বাবা ভ্যানচালক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে শিশু আরিফা কচুয়া সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি হতে গিয়ে শিক্ষকদের এক প্রশ্নের জবাবে আরিফা আক্তার জানায়- বড় হয়ে ডাক্তার হবে সে। আরিফার সে কথাই আজ সত্যি হয়েছে।
আরিফার বাবা আসাদুজ্জামান জানান, সেদিন মেয়ের কথা শুনে আমি নিজে অশিক্ষিত হয়ে তার আশা পূরণ করতে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছিলাম। আমার সে আশা আজ পূরণ হয়েছে। তবে এখন আশঙ্কায় আছি কিভাবে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাব। শুনেছি মেডিকেলে পড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার তো সেই সঙ্গতি নাই। তারপরও আমি আমার মেয়েকে বলেছি, তুমি যদি ডাক্তার হতে পারো অসহায় গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবা। বাবা হিসেবে এটা আমার তোমার কাছে চাওয়া।
আরিফার মা হামিমা আক্তার হেমা বলেন, অনেক কষ্টে অনেকটা সংগ্রাম করে আমরা আরিফার লেখাপড়া চালিয়েছি। আমার সোনার গহনা বন্ধক রেখেও ওদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। আমি বাড়িতে বসে দর্জির কাজ করি। ওর বাবা লেখাপড়া না জানলেও হাড়ভাঙা কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। আমার খুব ইচ্ছা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। আল্লাহ আমার সেই আশা পূরণ করেছে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাও করব দুই মেয়ের জন্য।
আরিফার এমন সাফল্যে খুশি কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. মহিদুল বলেন, আরিফার বাবা-মা দুজনেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদের লেখাপড়ার জন্য। আসাদুজ্জামান ভ্যান চালিয়ে শহরে থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তিনি নিতান্ত হতদরিদ্র মানুষ। আমি খুব খুশি তার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। তিনি এলাকার বিত্তবান মানুষকে আরিফা আক্তারের পড়াশোনায় সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান।