বগুড়ায় স্কুল মাঠে ধান-সবজির হাট, হাঁক-ডাকে পাঠদান ব্যাহত
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
বগুড়ার কাহালুর দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দীর্ঘদিন ধরে ধান ও সবজির হাট বসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় হাটটি উচ্ছেদে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, বগুড়ার কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুর্গাপুর হাট-বাজার অবস্থিত। ১৯৪০ সালে বাজারের কাছেই ৫৩ শতক জমিতে দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। দীর্ঘদিন ধরে সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার স্কুল মাঠে হাট বসে। সকালে ধান ও বিকালে সবজি কেনাবেচা চলে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক ও চিৎকারে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। পাশাপাশি ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনায় বিদ্যালয়ের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। স্কুল মাঠে হাট বসার কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাঠে ধান ও সবজির কেনাবেচা চলছে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা রিকশা, ভ্যান ও ভটভটিতে ধান ও সবজি নিয়ে হাটে এসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হট্টগোলে সরগরম বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
এদিকে হাটের ইজারাদার দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন গত ৫ আগস্টের পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার অংশীদার নিতাই চন্দ্র জানান, দুর্গাপুর হাটের জায়গা প্রায় এক একর। কিছু স্থানে শেড ও পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় হাটের জায়গা কমে গেছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে হাটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে আসছে। স্কুল মাঠ ব্যবহারে স্থানীয়রা কোনদিন আপত্তি করেননি। এবার উচ্চদরে ইজারা নেওয়ায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, স্কুল মাঠে হাট বসায় লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। মাঠে হাটের ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা স্কুলের বাথরুম ব্যবহার করায় তা অপরিষ্কার থাকে। আবার বর্ষার সময় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের বারান্দা ও শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়েন। বিদ্যালয় মাঠে হাট বন্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে কয়েক দফা অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ও গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও মাঠে হাট বসানো ঠেকানো যাচ্ছে না। ইজারাদার পেশিশক্তির মাধ্যমে স্কুল মাঠে হাট বসান।
কাহালু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয় মাঠে হাট না বসাতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হাবীব জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।