Logo
Logo
×

সারাদেশ

কার্ডিওলজিস্ট হয়ে গরিবের সেবা দিতে চান শিক্ষকের সন্তান ফাইয়াজ

Icon

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম

কার্ডিওলজিস্ট হয়ে গরিবের সেবা দিতে চান শিক্ষকের সন্তান ফাইয়াজ

দিনাজপুরের ছেলে আবুল ফাইয়াজ। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ৮৯.২৫ নম্বর পেয়ে সারা দেশে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। ভবিষ্যতে নিউরোলোজিস্ট অথবা কার্ডিওলোজিস্ট হয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চান তিনি। 

মেধাবী ছাত্র ফাইয়াজ বলেন, মহান আল্লাহ পাক আমার সেই ইচ্ছার প্রথম ধাপ পূরণ করেছেন। ভবিষ্যতে আমি একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে এ দেশের এবং নিজ এলাকার অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে চাই।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। একটু বড় হয়ে যখন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখি গরিব অসহায় মানুষ অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, মৌলিক চাহিদা হিসেবে চিকিৎসা সেবাটুকু থেকেও অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন ছোটবেলার ইচ্ছা পরিবর্তন করে এসব গরিব-অসুস্থ মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। 

তিনি বলেন, মূলত উচ্চ মাধ্যমিকে এসেই আমার ইচ্ছা হয় চিকিৎসক হয়ে এসব মানুষের সেবা করার। আসলে চিকিৎসক হয়েই গরিব অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব, তাদের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। 

আবুল ফাইয়াজের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। বাবা-মা এবং দুই বোনসহ থাকেন দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকায়। বাবা রইসুল ইসলাম বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং মা মমতাজ বেগম গৃহিণী। রইসুল ও মমতাজ দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ফাইয়াজ। বড় মেয়ে জাকিয়া তাসনিম দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে তাকরিহার বয়স আড়াই বছর। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্যই বাবা রইসুল ইসলাম শিক্ষকতার স্বল্প আয় দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন শহরের ভাড়া করা বাড়িতে।

রইসুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে চতুর্থ হয়েছে- এটা শুধু আমার নয়, দিনাজপুরবাসীর গর্ব। তার প্রতি আমার বিশ্বাসটা বেড়ে যায় যখন এসএসসিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করে। 

ফাইয়াজের বাবা বলেন, আমি কখনও তাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করিনি। শুধু বলেছি- তুমি যাই করবে, তা ভালোভাবে করতে হবে। যাই হোক, সে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে, আমি চাই সে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে নিজ এলাকার ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করুক। এজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি। 

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করা প্রসঙ্গে আবুল ফাইয়াজ বলেন, আমি কখনো পজিশন নিয়ে ভাবিনি, ভেবেছি প্রোগ্রেস নিয়ে। আমাকে ভালো করতে হবে- এই স্বপ্ন নিয়েই আমি চেষ্টা করেছি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার ভর্তির স্বপ্ন ছিল, মহান আল্লাহপাক আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। 

ফাইয়াজ বলেন, কলেজে পড়ার শুরু থেকেই জিহাদী স্যারের বায়ো-নোলেজ সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর স্যারের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা আমার মেডিকেলে পড়ার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমি আজ জয়ী হয়েছি। 

বায়ো-নোলেজ সেন্টারের মেন্টর সাইফুল্লাহ আল জিহাদী বলেন, আবুল ফাইয়াজ যে ভালো করবে তাতে আমার প্রবল বিশ্বাস ছিল। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ ও একাগ্রতা, শিক্ষকদের কথামতো লেখাপড়া করা, অর্থাৎ একজন ভালো শিক্ষার্থীর যা যা গুণ থাকা দরকার, তার সবই আছে ফাইয়াজের মধ্যে। যার কারণেই সে সফল হয়েছে। 

আবুল ফাইয়াজ দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর দিনাজপুর কালেক্টরেট স্কুলে পড়েন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন দিনাজপুর সেন্ট ফিলিপস উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই তিনি ২০২২ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ নিয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করেন। এরপর দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জন করেন। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম