স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
কুমিল্লার সাবেক এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বাহার ও মেয়ে সাবেক কুসিক মেয়র তাহসিন বাহার সুচনার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এসব মামলা করা হয়।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
দুদক সূত্র জানায়, মোট ৭২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে সাবেক এমপি বাহার, তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাহার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৬ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ২৫৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৫ টাকার লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় সাবেক মেয়র তাহসিন বাহারকে আসামি করা হয়েছে। তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের অসঙ্গতিপূর্ণ ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৭০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তার ১৬টি ব্যাংক হিসাবে ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৯৩ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তৃতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে বাহাউদ্দীন বাহার ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসার বিরুদ্ধে। একজন গৃহিণী হয়ে তার স্বামীর অবৈধ সম্পদ বৈধ করার চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া এই সাবেক এমিপির আরও দুই মেয়ে- আয়মান বাহারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং আজিজা বাহারের বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ২২২ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
এসব তথ্য যাচাইয়ের জন্য তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দিয়েছে দুদক।
জানা গেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে আছেন সাবেক এমপি বাহার ও তার পরিবার। তাকে কুমিল্লার গডফাদার বলা হতো। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে বাহার এবং তার মেয়ের বিরুদ্ধে হত্যাসহ তিনটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।
গত নভেম্বরে বাহার ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
বাহাউদ্দিন বাহার ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার নৌকার মনোনয়নে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর তার মেয়ে সূচনা গত বছরের ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি মেয়র পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, বাহার এবং তার পরিবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাবে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দুদকের সময়োপযোগী পদক্ষেপ। বাহারের পৃষ্ঠপোষকতায় আরও শত শত লোক দুর্নীতি করেছেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, ১৬ বছর আগে সাবেক এমপি বাহার ছিল একেবারেই শূন্য। ব্যাংকের ৪০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য তাকে ধার-দেনা করতে হয়েছে। সেই লোক এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। তার এখনো বহু গুপ্তধন রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যথাযথভাবে তদন্ত করে তার কালো টাকাগুলো বের করে আনা দরকার।