স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা তুলছেন আ.লীগ নেতা
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
পিরোজপুরের মাঠবাড়িয়ায় মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন খান ৫ মাসের বেশি সময় পালিয়ে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আলমগীর হোসেন খান চরম দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রোষানলে পালিয়ে যান। ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (সহকারী প্রধান শিক্ষক) মো. এনামুল হক মৃধা পলাতক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন খানের বেতন-ভাতার সুযোগ করে দেওয়ায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আলমগীর হোসেন খান উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায়, আলমগীর হোসেন খান ২০১০ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেন। তার ১৩ বছরের চাকরিকালে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতন, পরীক্ষার ফি, টিউশন ফি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ভাড়া, ২৯টি দোকান ভাড়া এবং মোটা অংকের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন বসবাসকারীদের প্রতিষ্ঠানের জমি ছেড়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। বিজ্ঞনাগার, শহিদ মিনার, পুকুর খনন ও আইসিটি ল্যাবসহ বিভিন্ন খাতে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি অলিখিত আওয়ামী লীগ অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীসহ লাঠিসোটা নিয়ে মিরুখালী বাজারে বিরোধী দল দমনে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আলমগীর হোসেন খানের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদনকারী গোলাম কিবরিয়া বাচ্চু জানান, তাদের আবেদনের পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর ২ মাস কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খানকে পুনর্বাসনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মৃধা তাকে বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
মিরুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি, সাবেক মিরুখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান খোকন জানান, ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খান এবং তার দোসররা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাকে আবার পুনর্বাসন করা হলে তারা মেনে নেবেন না বলে তিনি জানান।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক মৃধা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কারো অনুপস্থিতিতে ৪ মাস পর্যন্ত বেতন দেওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এতদিন বেতন-ভাতা করেন। এখানে তার কোনো হাত নেই। বই বিতরণের সময় সেশন চার্জ ছাড়া আর কোনো টাকা নেওয়া হয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম জানান, অনুপস্থিত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্ত করে রিপোর্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বেতন বন্ধ করা না করা অধিদপ্তরের ওপর নির্ভর করে।