বাংলাদেশে ঢুকে আমবাগান কেটে ফেলার ঘটনায় বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএসফ) সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশি কৃষকদের আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এ সময় বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় অন্তত ৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিএসএফের হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।
দিনভর উত্তেজনার মাঝে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দক্ষতায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় বিএসএফ এবং বিজিবি সীমান্তের উভয় দিকে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করে। এরপর পতাকা বৈঠকে বিএসএফ এ ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করার পর সীমান্ত এলাকা থেকে দূরে সরে যান বাংলাদেশি নাগরিকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিরণগঞ্জ সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৭৭-এর সাবপিলার ৩/৪ এস পিলারের কাছে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, গম কাটার অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে আম ও পেয়ারা গাছ কাটা শুরু করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের বাগানীদের বরই বাগান ধ্বংস করা শুরু করে তারা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর বাংলাদেশিদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ভারতীদের।
এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা হাঁসুয়া, লঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর চড়াও হয়। এতে তাদের অস্ত্র ও পাথরের আঘাতে অন্তত ৫-৬ জন গুরুতর আহত হন। এ সময় বিএসএফ একের পর এক হাতবোমা নিক্ষেপ করলে পরিস্থতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। পরে বিবিজির সদস্যরা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবৃত্ত করলে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়।
এরপর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই দেশের উভয় পাশে অতিরিক্ত জওয়ান অবস্থান নেয়। তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ স্বশস্ত্র অবস্থায় পুরো সীমান্ত এলাকাজুড়ে অবস্থান নেয়।
কয়েকজন কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বেলা ১১টার দিকে গম কেটে নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয়রা জড়ো হয়। একপর্যায়ে তারা বিএসএফকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের আম, বরই এবং পেয়ারা বাগান কাটতে শুরু করে। এ সময় প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে কর্মরত কৃষকরা পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা চালায় ভারতীয় নাগরিকরা। একপর্যায়ে আমরা সীমান্তে এসে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করি।
এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা নোম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত ৬ তারিখ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৭৭নং আন্তর্জাতিক মেইন পিলারের ২এস সাব-পিলার এলাকায় নোম্যান্স ল্যান্ডের ১০০ গজের মধ্যে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এখন আবারও তারা সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশিদের হামলা চালিয়েছে। আমাদের জীবন থাকতে আমরা এক ইঞ্চি মাটি ভারতকে দখল করতে দেব না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৯ মহানন্দ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, চৌকা সীমান্তের পর আজ পার্শ্ববর্তী কিরণগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশের আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের কৃষকদের ফসল ও গাছ-পালা কেটে দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আমরা ও বিএসএফ সীমান্তে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করে।
বিকালে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এ ঘটনার জন্য আমাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে। সীমান্তে তারা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা এ ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড় দেব না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সীমান্তে তৎপর রয়েছি বলে জানান তিনি।