সামান্য দোকানদার থেকে কোটিপতি, কে এই আসলাম
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সামান্য ওষুধ দোকানদার থেকে কোটিপতি বনে যান আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম আলী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দুইবারের জেলা পরিষদ সদস্য। তার উত্থানের পেছনে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেনের আশীর্বাদে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, দখলদারিত্বসহ নানা রকম অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত হন আসলাম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও আসলাম আলী ভাঙ্গুড়ার বাসস্ট্যান্ডে একটি টিনের ঘরে ওষুধের দোকান চালিয়ে কোনো মতে দিন কাটাতেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মকবুল হোসেন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশের পরেই মকবুলের সুনজরে আসায় খুব তাড়াতাড়ি অর্থবিত্ত ও ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন। ২০১৭ সালে মকবুল হোসেনের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো তিনি জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুতল ভবনের মালিক, নামে বেনামে কিনেছেন জমি, নগদ কয়েক কোটি টাকা রয়েছে তার কাছে।
আসলাম আলীর অন্যতম বিতর্কিত কাজ ছিল স্কুল, কলেজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নিয়োগের জন্য তিনি রীতিমতো নিলাম ডাকতেন। বেশি টাকা দেওয়ার প্রার্থীদের নিয়োগ দিলেও পরে আরও বেশি টাকা পেলে আগের প্রার্থীদের টাকা ফেরত দিয়ে নতুন প্রার্থী নিয়োগ দিতেন।
এছাড়া জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে পাওয়া প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ছিল তার আয়ের আরেক উৎস। তার সময়ের প্রকল্পে কোনো কাজ না করে ক্ষেত্র বিশেষে নাম মাত্র কাজ করে পুরো বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। সর্বশেষ উপজেলার উত্তর মেন্দা ডেঙ্গাপাড়া জামে মসজিদের নামে জেলা পরিষদের বরাদ্দ করা ৩ লাখ টাকার প্রকল্পের প্রায় পুরো টাকা আত্মসাৎ করে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এলাকাবাসীর চাপে পরে কিছু টাকা ফেরত দিলেও পুরো প্রকল্পের কাজ আজও সম্পন্ন হয়নি।
আসলামের আরেক আয়ের উৎস ছিল পুলিশের দালালি। স্থানীয় কোনো ব্যক্তি তার বিরোধীতা করলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন তিনি। পরে তাদের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও আসলাম আলী এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিএনপির কিছু নেতাকে টাকার বিনিময়ে নিজের পক্ষে রেখেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফলে স্থানীয় মানুষজন আওয়ামী লিগের পতনের পরেও অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
দৃশ্যমান আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও কীভাবে এত বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আসলাম আলী যুগান্তরকে বলেন, আমার ধান, চাল ও পাটের ব্যবসা আছে, দুইটি ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে। এছাড়া আমার স্ত্রীও একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে।