বৃহত্তর সিলেটের আলেমেদ্বীন, সৎপুর কামিল মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস, সাবেক মুহাদ্দিস ও সাবেক প্রিন্সিপাল আল্লামা আব্দুল হাইয়ের (ছাতকী হুজুর) জানাজায় লাখো মানুষের ঢল। মাঠের চারিদিকে নানা শ্রেণির মানুষের চোখের নোনা জল গড়িয়ে পড়েছে। হাওড়ের এলাকা কানায় কানায় মানুষের ভিড় জমেছিল।

শুক্রবার বিকালে মুক্তিগাঁও গ্রামের পশ্চিমের ময়দানে ভারতের হযরত মাওলানা মাসুম আহমদ তার জানাজা পড়ান।

সিলেট বিভাগের হাজারো মুহাদ্দিসের ওস্তাদ সুনামগঞ্জের ছাতক শিল্প নগরী উপজেলার কালারুকা ইউপির শাহ সুফি মোজ্জামেল আলী (রহ.) মসজিদের সাবেক খতিব আল্লামা আব্দুল হাই মুহাদ্দিস আর নেই।

বৃহস্পতিবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) দেশের শীর্ষ মুহাদ্দিস ও বরেণ্য আলেম আল্লামা আব্দুল হাই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ৪ মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন আল্লামা আব্দুল হাই। পরে দারুল হাদিস সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সালে আলিম, ১৯৬৯ সালে ফাজিল এবং ১৯৭২ ইংরেজি সালে কামিল হাদিস বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং মেধা তালিকায় স্থান দখল করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ২৩ মার্চ সৎপুর কামিল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯৮১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সৎপুর মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল ও মুহাদ্দিস পদে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে ছাতক জালালিয়া ও দ্বীনের টুক মাদ্রাসায় সুপারিন্টেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন।

আল্লামা আব্দুল হাই ১৯৮৬ সালে পর ১ অক্টোবর পূনরায় সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করে ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হাদিসের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে ১ মে পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। বিভিন্ন সাময়িকীতে বাংলা ও আরবিতে অনেক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে তার। তা ছাড়াও কামিল জামাতের কয়টি হাদিস আরবি ও উর্দু ভাষায় শরাহ লিখেছেন।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মুক্তির গ্রামের তাঁর পৈতৃক নিবাস। মৃত আব্দুল মান্নান ও মা মৃত হানিফা বেগমের ছেলে আব্দুল হাই। জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ও ছাতক প্রেস ক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রনি, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম হিরন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী রেজাউল করিম রেজা, অর্থ সম্পাদক আতিকুর রহমান, মোশাহিদ আলী, নাজমুল ইসলাম, আরিফুর রহমান মানিক শোক প্রকাশ করেছেন। তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।