অঢেল সম্পদের মালিক রাজউকের ইলিয়াস বললেন- আমার মাথায় সমস্যা
নজরুল ইসলাম পলাশ, মাদারীপুর
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
ইলিয়াস হোসেন মোল্লা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী নেতাদের তদবিরে চাকরি পান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক)। আর এ চাকরি পেয়েই যেন তার কপাল খুলে যায়। এখন তার হাতে কোটি কোটি টাকা। এত টাকার মালিক কীভাবে হলেন, প্রশ্ন করলে তিনি জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমি অসুস্থ, আমার মাথায় সমস্যা আছে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামের নজর আলী মোল্লার ছেলে ইলিয়াস হোসেন মোল্লা। গ্রামের বাড়িতে কয়েক কোটি টাকায় নির্মাণ করছেন আলিশান বাড়ি। এছাড়া নিজ খরচে কোটি টাকা দিয়ে করেছেন চারতলা মসজিদ। চলেন কোটি টাকার গাড়িতে। আওয়ামী সরকারের পতন হলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে।
তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী নেতাদের তদবিরে চাকরি পান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে। এ চাকরিই যেন তাকে আলাদিনের চেরাগ পাইয়ে দিয়েছে। ৮-১০ বছরে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।
এলাকাবাসী কেউ জানেন ইলিয়াস মোল্লা সচিবালায়ে বড় চাকরি করেন, আবার কেউ কেউ জানেন তিনি রাজউকের বড় অফিসার। তবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক ইলিয়াস তা এলাকার সবাই জানেন। বিত্তবৈভবের মালিক হলেও গ্রামের গরিব-দুঃখীদের সাহায্য না করার অভিযোগ আছে এলাকার মানুষের মাঝে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বালিয়া গ্রামে ইলিয়াস মোল্লার পৈতৃক ভিটা। বাড়িটি উঁচু দেওয়াল ঘেরা। দৃষ্টিনন্দন গেট। দূর থেকেই দেখা যায় নির্মাণাধীন একটি আলিশান বাড়ির আবরণ। ভেতরে ঢুকে বাড়িটির চোখ ধাঁধানো ডিজাইন দেখে অবাক হবেন যে কেউ। তিনতলা ভবন। ভেতরে ঘোরানো সিঁড়ি গম্বুজ আকার ধারণ করে উঠে গেছে ছাদে। বাড়িটির সৌন্দর্য বর্ধনে হাজার হাজার লাইটের পয়েন্ট রাখা হয়েছে। পেছনে গেলেই চোখে পড়ে একটি বড় পুকুর। সিসি ঢালাই করে বাঁধানো হয়েছে পুকুরের পাড়। বাড়িসংলগ্ন স্থানে ছাদসহ করা হয়েছে বড়সর একটি ঘাট। ঘাটের দুপাশে পুকুরের মধ্যে করা হয়েছে ছাদসহ বসার স্থান। পুকুরের পাড় থেকে বাসার স্থানে যাওয়ার জন্য করা হয়েছে পোল। একটি বসার স্থানের ছাদে বাড়ির দোতলা থেকে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। বাড়ির দোতলা থেকে সরাসরি এখানে এসে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখলেই শখ ও সাধ্যের অনুমান করা যায়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে করা হচ্ছে এ বাড়িটি। বাড়ির প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া বাড়ির পাশেই নিজ খরচে কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন চারতলা একটি মসজিদ। পুরো মসজিদ টাইলস দিয়ে ঢাকা। মসজিদের চার পাশে দেওয়া হয়েছে বাউন্ডারি ওয়াল। বাউন্ডারি ওয়ালের মধ্যেই মসজিদের পাশে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পারিবারিক কবরস্থান।
ইলিয়াস মোল্লার বাবা নজর আলী মোল্লা বয়সের ভারে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। বাড়িতে ঢুকেই দেখা হয় তার সঙ্গে। তিনি এ বাড়ি করেছেন প্রথমে দাবি করলেও পরে স্বীকার করেন বাড়িটি তার বড় ছেলে ইলিয়াস মোল্লা করেছেন। তিনি একসময় জেলার চরমুগরীয়া বন্দরে পাটের ব্যবসা করতেন। সে ব্যবসার টাকা দিয়ে তিনি এলাকায় বেশকিছু জমি রেখেছেন। পাটের ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক আগেই। এখন বয়সের ভারে চলফেরা করতে কষ্ট হয়। বড় ছেলেই দেখেন তাদের।
স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, খলিল তালুকদার ও হাবিবুর রহমান জানান, ‘ইলিয়াস ঢাকায় বড় চাকরি করেন। তার বাবা নজর আলী আগে পাটের ব্যবসা করতেন। তিনি বালিয়া গ্রামেরই বাসিন্দা। এখানে নজর আলী টিনের বাড়ি করে থাকতেন। ইলিয়াস চাকরি পাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবর্তন হওয়া শুরু করে। চাকরির কয়েক বছর পরই দেখি ইলিয়াস দামি গাড়ি নিয়া বাড়িতে আসেন। তার কিছুদিন পর দেখি টিনের ঘর ভেঙে আলিশান বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। চার দিকে বাউন্ডারি দিছে। পাশেই একটি চারতলা মসজিদ দিছেন। ইলিয়াস অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছেন। এত টাকার মালিক হওয়ার পরও এলাকার গরিব মানুষদের কোনো রকম সাহায্য করেন না।
মোবাইল ফোনে মো. ইলিয়াস হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। তবে তার এতো অর্থসম্পদ কিভাবে হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, আমার মাথায় সমস্যা আছে। আমি কিছু বলতে পারব না। মাথায় সমস্যা নিয়ে আপনি দায়িত্ব পালন করছেন কিভাবে প্রশ্ন করলে তার কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু তার মাথায় সমস্যা আছে এ কথা বলতে থাকেন।