রাত হলেই তিনি বেরিয়ে পড়েন কুকুরদের খাবার দিতে
খোন্দকার রুহুল আমিন, টেকেরহাট (মাদারীপুর)
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
দুই বছর ধরে রিয়াদ নামে এক যুবক প্রতি রাতে মোটরসাইকেলে দুই ব্যাগভর্তি খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরের অলিগলিতে। মোটরসাইকেলের শব্দ ও রিয়াদের ডাক রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরদের খুব পরিচিত। যেন আত্মার সম্পর্ক।
কুকুরগুলো ছুটে আসতেই পলিথিন বিছিয়ে খাবার দেওয়া হয়। কুকুরগুলোও মজা করে খাবারগুলো খায়। পশুর প্রতি এমন প্রেম দেখে অবাক এলাকাবাসীও।
জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পূর্ব রাস্তি এলাকার সেলিম চৌকিদার ও নাসরিন বেগমের ছেলে রিয়াদ চৌকিদার (২২)। তেমন একটা পড়াশোনা হয়নি রিয়াদের। জীবন-জীবিকার তাগিদে একটি মোটরসাইকেলের শোরুমে চাকরি করেন। সারাদিন শো-রুমে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে পরিবারের সহযোগিতায় কুকুরদের জন্য ভাত ও তরকারি রান্না করা হয়। বেশিরভাগ সময়ই মুরগির মাংস রান্না করেন।
মাস শেষে বেতনের প্রায় পুরো টাকাই ব্যয় করেন কুকুরদের খাবারের জন্য। নিজে কী খাবেন, ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানোর চিন্তা না থাকলেও দিন শেষে কুকুরদের কিভাবে খাবার দিবেন, তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকেন রিয়াদ। কুকুরের প্রতি এমন প্রেম আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। তাই তার এই প্রেম দেখে এলাকাবাসীও মুগ্ধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ, বাদামতলা, কলেজ রোড, মিলন সিনেমা হল, পুরান বাজার, ১নং শকুনি, চৌরাস্তা, রেন্ডিতলা, লঞ্চঘাট, কোটের মোড়, দরগাখোলা, বটতলা, মস্তফাপুরসহ প্রতিদিন প্রায় ১০-১২টি স্থানে কুকুরদের জন্য খাবার দেন রিয়াদ। খাবারগুলো মাটিতে দিলে ময়লা লাগবে বলে পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় খাবারগুলো দেওয়া হয়। দুইটি ব্যাগে করে মোটরসাইকেল নিয়ে খাবার দিতে যান রিয়াদ।
নির্দিষ্ট জায়গায় গেলে মোটরসাইকেলের শব্দ আর রিয়াদের ডাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুকুরগুলো একসঙ্গে জড়ো হয়। তখন তাদের খাবারগুলো দেওয়া হয়। খাবার দেওয়ার সময় কুকুরদের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দেন রিয়াদ। কুকুরগুলোও চোখ বন্ধ করে রিয়াদের আদর গ্রহণ করেন। অনেক সময় কুকুর অসুস্থ হলে, ওষুধও খাওয়ান, সেবা করেন।
বর্তমান যুগে পশুর প্রতি এমন ভালোবাসা খুব একটা চোখে না পড়লেও মাদারীপুরের রিয়াদ গত দুই বছর ধরে করে যাচ্ছেন।
মাদারীপুরের পুরানবাজার এলাকার ইসমাইল খান বলেন, রিয়াদ নামের ছেলেটির বয়স খুব কম। এত ছোট বয়সেই এভাবে পশুদের প্রতি ভালোবাসা বিরল। তাকে দেখে অন্যরাও পশুদের ভালোবাসায় উৎসাহ পাবেন।
এ ব্যাপারে কুকুরপ্রেমী রিয়াদ চৌকিদার বলেন, আমি কুকুরদের প্রায় ২ বছর ধরেই খাওয়াচ্ছি। কুকুর দেখলেই সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়; কিন্তু আমার কাছে ওদের খুব ভালো লাগে। আমি ওদের খেতে দিয়ে আনন্দ পাই। তাই বেতনের প্রায় পুরো টাকাই কুকুরদের জন্য ব্যয় করি। এতে আমি খুশি। আমার তৃপ্তি হয়।
মাদারীপুরের স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের সদস্য জাহিদ হাসান খান বলেন, রাস্তায় বেড়ে উঠা কুকুরগুলো সব সময়ই অবহেলিত। কেউ ওদের খাবার দেওয়া তো দূরের কথা, কাছে গেলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তাই রিয়াদের এই কাজকে সাধুবাদ জানাই। ওর বয়স কম হলেও চিন্তাধারা খুব উন্নত। রিয়াদকে দেখে আরও যুবক ও বিভিন্ন সংগঠন এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি।
মাদারীপুরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিবস রঞ্জন বাকচী বলেন, রিয়াদের এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আসলে আমাদের এ ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে তাকে টেকনিক্যাল সহযোগিতা করা যাবে। আর এ ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ এলে তাকে সহযোগিতা করো হবে। তাই সমাজের বিত্তবানদের আহবান জানাই, যাতে তারা রিয়াদের পাশে থেকে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।