দখল-চাঁদাবাজি, মারধর, বৈদ্যুতিক শক ও হাত-পা ভাঙার অভিযোগ
নড়িয়ায় বেপরোয়া সাবেক যুবদল নেতা রনি মাঝি
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৯ এএম
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সাবেক এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজি, ধরে এনে মারধর, বৈদ্যুতিক শক ও হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম রনি মাঝি।
তিনি ঘড়িসার ইউনিয়নের বাহির কুশিয়ার মৃত হায়দার আলী মাঝির ছেলে। রনি নড়িয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে ঘড়িসার মডার্ন সিটির অফিস দখল, ইতালি প্রবাসীর জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদককে মারধর ও এক ব্যবসায়ীকে ধরে এনে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নড়িয়া থানার এক এসআইর হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা জানান, তার অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা রনি মাঝির অপকর্মের বিষয়ে শুনেছি। সে পুলিশের ওপরও হামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘড়িসার মডার্ন সিটির মালিক নাজির হোসেন খান জানান, ২০১০ সাল থেকে ঘড়িসার এলাকার অলোক রানী কুন্ডু ও তার ছেলেদের কাছ থেকে নাজির হোসেন খান গংরা সাড়ে ৮ একর জমি ক্রয় করে সেখানে জমি ভরাট করে ১২০টি প্লট বানান। নাম দেওয়া হয় ঘড়িসার মডার্ন সিটি। এরমধ্যে ৪০টির মতো প্লট বিক্রি করে। ৫ আগস্টের পর রনি মাঝি ঘড়িসার মডার্ন সিটির অফিসটি জোর করে দখল করেন। এরপর সেখানে যারা প্লট কিনেছেন তাদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন। ৫ জানুয়ারি সেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছে আগুন দেন তিনি।
এরআগে ১৯ নভেম্বর একই এলাকার আনিছুর রহমান হাওলাদারের ছেলে পন্ডিতসার বাজারের ব্যবসায়ী অরন আহাম্মেদ হাওলাদারকে ধরে নিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেন। পরে ঘড়িসার মডার্ন সিটির অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুকিত শক দেন। এরপর তার স্ত্রী শান্তা আক্তারের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরিবারের লোকজন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে অরন আহাম্মেদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য ২২ নভেম্বর আবারও তাকে ধরে নিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে নড়িয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে পাগলার মোড় এলাকার ইতালী প্রবাসী আলাউদ্দিন লাকুড়িয়ার জমিতে দলের নাম ভাঙিয়ে জবরদখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেন রনি মাঝি। এ ঘটনায় শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেও পরে চাপের মুখে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন ভুক্তভোগীরা।
রনি মাঝি এতই বেপরোয়া যে, সম্প্রতি নড়িয়ার চন্ডিপুর স্কুলে তার চাচাতো ভাই রবিন মাঝি মাদক বিক্রির সময় পুলিশের হাতে আটক হন। খবর পেয়ে রনি মাঝি গিয়ে পুলিশকে মারধর করে আসামিকে ছাড়িয়ে নেন। সেখানে মারাÍক আহত হন এসআই ফরহাদ হোসেন। তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিআই-১ কামরুল হোসেন তালুকদার। এ ঘটনায় নড়িয়া থানার এসআই ইকবাল হোসেন একটি মামলা করেছেন।
মডার্ন সিটির পরিচালক নাজির হোসেন খান বলেন, রনি আমাদের মডার্ন সিটির অফিস দখল করে মালামাল ও কাগজপত্র নিয়ে গেছে। রাতের আঁধারে গাছপালা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে। অফিসের মধ্যে প্রতিদিন রাতে মাদক সেবন এবং নারীদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করছে।
ভুক্তভোগী অরন আহাম্মেদের মা রিনা আহম্মেদ বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় রনি দোকানের প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করায় তাকে ধরে নিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শক দেয়। বর্তমানে অরন অসুস্থ শরীর নিয়ে জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আলাউদ্দিন লাকুড়িয়ার স্ত্রী ইসমত আরা বেগম বলেন, আমদের ক্রয়কৃত ৫ শতাংশ জমিতে জবরদখল করে রনি মাঝি দোকানঘর করেছে। প্রতিবাদ করলে আমাদের ভয় দেখায়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেও চাপের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বধ্য হয়েছি। এরপর পুনরায় আমি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর বলেন, ৭ নভেম্বর আমি ও আমার ছেলে বিএনপির একটি মিছিলে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী রনি মাঝি হামলা করে। তারা আমার ছেলের পা ভেঙে দিয়েছে। এ ঘটনায় নড়িয়া থানায় আমি মামলা করছি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরণ যুগান্তরকে বলেন, রনি মাঝির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ শুনেছি। কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদারের জায়গা বিএনপিতে নেই। সে আমাদের দলের কেউ নয়।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে রনি মাঝি যুগান্তরকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। কেউ গাঁজা, মদ, ইয়াবা সেবন বা বিক্রি করলে এবং কোনো অপরাধ করলে, আমি তাদের ধরে এনে শাস্তি দেই। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
তিনি বলেন, আমি আলাউদ্দিন লাকুড়িয়ারের জমি দখল করিনি। আমার জায়গায় দোকান করছি। মডার্ন সিটি নামে যে প্রকল্প করেছে সেখানে আমাদের জমি আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা আমাদের জায়গা দখল করে নিয়েছিল। এখন সুযোগ হয়েছে, তাই আমি আমার জায়গা দখল করে নিয়েছি। এছাড়া অরন ইয়াবা ব্যবসায়ী এজন্য তাকেসহ ১৭ জনকে ধরে এনে বিচার করেছি। প্রত্যেকের কাছে মাদক পেয়েছি।