ফিল্মি কায়দায় প্রবাসীকে অপহরণের চেষ্টা, জনতার ধাওয়া
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৫ পিএম
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইজিবাইক গতিরোধ করে মোহাম্মদ ফোরকান (৩৭) নামের এক প্রবাসীকে অপহরণের চেষ্টা ও বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় তার কাছ থেকে লুটে নিয়েছে নগদ টাকা, দুবাইয়ের দেরহাম ও একটি মোবাইল ফোন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী কোরালখালী এলাকার জাকারিয়া যুগান্তরকে বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমি ইলিশিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে চকরিয়া বদরখালী সড়কের পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া লম্বা রাস্তার ওপর দেখতে পাই এক লোককে টানাহেঁচড়া করে মাইক্রোবাসে তুলে নিতে। ওই সময় সাহারবিলের রামপুর স্টেশন এলাকায় থাকা আমার ভাই কামাল উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে জানালে সড়কে ব্যারিকেড দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই সময় অবস্থা বেগতিক দেখে অপহরণকারীরা ওয়াহেদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক পথচারীকে চাপা দিয়ে তাদের ব্যবহৃত কালো রংয়ের টিআরএক্স মাইক্রোবাস (রেজি: ঢাকা-মেট্রো-চ-১১-৬৪৯৩) গাড়িটি পুনরায় ঘুরিয়ে নিয়ে বদরখালীর দিকে চলে যায়।
পরে বিক্ষুব্ধ জনতা গাড়িটির পেছন থেকে ধাওয়া করলে কিছুদূর সামনে গিয়ে চোয়ারফাড়ি বাজারের পুরাতন রাস্তায় গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যায় অপহরণকারী দুর্বৃত্তরা।
পরে চকরিয়া থানার এসআই সাকিবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপহরণকারী চক্রের ফেলে যাওয়া গাড়িটি আটক করে। পরে আহত দুইজনকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আহত প্রবাসী মোহাম্মদ ফোরকান উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভেরুয়াখালীপাড়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে। অপর আহত ওয়াহেদুল ইসলাম সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর উমখালী গ্রামের আবু ছিদ্দিকের ছেলে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) অপহরণ চেষ্টার শিকার প্রবাসী ফোরকানের পিতা জয়নাল আবেদীন (৬০) বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ৬ জন অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীর বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
প্রবাসীর বাবা জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, আমার ছেলে দুবাইয়ে এসি মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রায় ২ মাস আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদর চিরিঙ্গা থেকে একটি টমটম গাড়িতে বাড়ি ফিরছিল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বর্ণিত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা ৬ জন দুর্বৃত্ত পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পেছন থেকে একটি টিআরএক্স মাইক্রোবাস গাড়িতে করে এসে আমার ছেলের টমটম গাড়ির সামনে গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তারা আমার ছেলের নাম ফোরকান কিনা? দুইটি বিয়ে করেছে কিনা- জিজ্ঞাসা করে। এ অবস্থায় অপহরণকারীরা টমটম গাড়ি থেকে টানা-হেঁচড়া করে নামিয়ে আমার ছেলেক জোরপূর্বক তাদের গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে তারা গাড়ির ভেতরে আমার ছেলের ডান চোখের ভ্রুতে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত ও তাদের হাতে থাকা বন্দুকের বাট দিয়ে আমার ছেলের বুকে-পিঠে, কোমরে ও সর্ব শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর জখম করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার একপর্যায়ে অপহরণকারীরা আমার ছেলের কাছে থাকা নগদ ৭৫ হাজার টাকা ও দুবাইর ৫৫০ দেরহাম (বাংলার ১৮ হাজার ৭০০ টাকা) এবং ১৮ হাজার টাকা দামের ব্যবহৃত ১টি রেডমি স্মার্ট মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। গাড়ির ভেতরে আমার ছেলে ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ শোর-চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তা টের পেয়ে অপহরণকারীরা আমার ছেলেকে নিয়ে তাদের গাড়িটি ইলিশিয়া বাজার থেকে পুনরায় পূর্ব দিকে রামপুর স্টেশনে পৌঁছে। সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িটি আটক করার চেষ্টা করে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। অপহরণকারী চক্রের ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অপহরণকারী চক্রকে ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।