ইজতেমা নিয়ে ফের দুই পক্ষের উত্তেজনা
মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত জুবায়েরপন্থিরা, মামলা করতে পারছে না সাদপন্থিরা
টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একপক্ষ ইজতেমা প্রস্তুতির কাজ করছে মাঠে। অন্যপক্ষ উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে হত্যা মামলা করার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সাদপন্থিরা ১৮ ডিসেম্বর নিহত বেলাল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তারা জিএমপি সদর দপ্তর, জেলা প্রশাসন ও টঙ্গীতে উপপুলিশ কমিশনারের দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
বৈঠক শেষে সাদপন্থিরা বলেছেন, আমরা হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে এসেও টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করতে পারছি না। পুলিশ আমাদের কথা শুনছে না, আদালতের আদেশ মানছে না। পুলিশ বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জুবায়েরপন্থিরা ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা করতে ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতির কাজ করছেন।
জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি টঙ্গী ময়দানে শুরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সাদপন্থিরা দ্বিতীয় পর্ব করতে না পারলে এক পর্বেই হবে ইজতেমা। এরই মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে সংঘটিত সহিংসতায় তিন মুসল্লি নিহতের ঘটনায় জুবায়েরপন্থিদের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এ মামলায় ইতোমধ্যে সাদপন্থি তিন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। নিহত তিনজনের মধ্যে একজনের পরিবার হত্যা মামলা করার জন্য হাইকোর্টের মাধ্যমে আদেশ পেয়ে থানায় এজাহার করতে এসেছেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে ইজতেমার জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে দিনরাত কাজ করছেন শুরায়ে নেজাম বা জুবায়েরপন্থিরা। ইতোমধ্যে জুবায়েরপন্থিদের পক্ষ থেকে সাদপন্থিদের ইজতেমা করতে না দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আর সাদপন্থিরা ইজতেমা করতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে আবার দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে ১৮ ডিসেম্বর তিন মুসল্লি নিহত হন। নিহতদের জুবায়েরপন্থিরা তাদের সাথি বলে দাবি করে ২৯ জন সাদপন্থিকে শনাক্ত এবং শত শত অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাদপন্থি তিন নেতা গ্রেফতার হন। বুধবার ২৩ জন উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন লাভ করেছেন।
উচ্চ আদালতে আবেদন করার পর আদালত টঙ্গী থানা পুলিশকে ১৮ ডিসেম্বর নিহত বেলাল হোসেনের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহণ করছে না বলে বাদীপক্ষের অভিযোগ।
এ বিষয়ে সাদপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ বেলাল হোসেন হত্যা মামলা গ্রহণ করছে না। পরে বৃহস্পতিবার সকালে আমাদের কয়েকজন সাথি জিএমপির উপপুলিশ কমিশনারের (অপরাধ দক্ষিণ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ন্যায়বিচার দাবি করেন।
সাদপন্থিদের ইজতেমার বিষয়ে সায়েম বলেন, ইনশাল্লাহ, আমাদের ইজতেমা নির্ধারিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হবে। এতে কোনো সংশয় নেই।
জুবায়েরপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি হিসাবে মাঠে কাজ চলছে। আশা করি, সময়মতো কাজ শেষ হবে। সঠিক সময়ে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাল্লাহ।
টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, মামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) এনএম নাসিরুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, তাদের (সাদপন্থি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট থেকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ হয়েছে। একই ব্যক্তির নামে দুইবার হত্যা মামলা রুজুর বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।