
প্রিন্ট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম
বাড়ির আঙিনায় সারি সারি খাটিয়া

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম

নিহতের বাড়ির আঙিনায় রাখা হয়েছে সারি সারি খাটিয়া। প্রতিবেশী নারী-পুরুষ সবাই যেন শোকে পাথর। কখন আসবে প্রিয়জনের কফিন। পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তান ফাহিম সিদ্দিকী গোপালপুরের এক মাদ্রাসার ছাত্র। তিনি জানেন না তার প্রিয় মা-বাবা-ভাই ও খালা আর পৃথিবীতে নাই।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শোকে বিহ্বল প্রতিবেশীরা।
জানা যায়, উপজেলার ভাবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন সিদ্দিকী তার পুত্র মোহাইমিন সিদ্দিকীর (১৪) চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সপরিবারে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার রাজফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউন নামক স্থানে গেলে অ্যাম্বুলেন্সটি বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দূরপাল্লার বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ৪ জন পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মর্গে পাঠায়।
নিহত অন্যরা হচ্ছেন- ফারুক হোসেনের স্ত্রী মহসিনা খন্দকার (৪০), পুত্র মোহাইমিন সিদ্দিকী (১৪) ও তার খালা সিমা খন্দকার (৪২)।
নিহত ফারুক হোসেন সিদ্দিকীর ছোটভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুক সিদ্দিকী ভবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবন দত্ত গণউচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুক সিদ্দিকী।
মামুন সিদ্দিকী জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দেখা করতে বলেন। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।
ফারুক সিদ্দিকীর সহকর্মী রুবেল মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান ছিলেন। একজন নীতিবান মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা সবাই চলে এসেছি। এমন শিক্ষক আর হবে না। আমাদের সবসময় আগলে রাখতেন।
নিহত ফারুক সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী (চাচাতো বোন) সোমা সিদ্দিকা বলেন, স্যারের ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী মাদ্রাসায় পড়ে। হোস্টেলে থাকে। সে এখনো জানে না তার বাবা-মা আর ভাই পৃথিবীতে নাই।