লালমনিরহাটে পুলিশের ছবি তোলায় বিএনপি কর্মীদের মারধর, ২ ওসি প্রত্যাহার
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তফীহাট এলাকার একটি হিমাগারে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাওয়াতের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতকর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবিতে ঘটনার পরপরই গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় দুই ওসিকে প্রত্যাহারসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই হিমাগারটি কয়েক বছর ধরে ভাড়ায় চালাচ্ছিলেন স্থানীয় গোকুন্ডা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আখেরুল ইসলাম। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, মোস্তফীহাট এলাকার একটি হিমাগারে গতরাতে দাওয়াতে আসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী। ফলে সেখানে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা।
সূত্র জানায়, হিমাগারটিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আখেরুল ইসলামের ডাকে নয়, সেখানে এর মূল মালিকের আমন্ত্রণেই পুলিশ কমিশনার গিয়েছিলেন।
বিএনপি কর্মীরা অভিযোগ করেন, হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির দায়িত্বে থাকা হিমাগারে পুলিশ কর্মকর্তারা দাওয়াতে যোগ দিয়েছেন- এমন খবরের ভিত্তিতে স্থানীয় যুবদলের দুই কর্মী সেখানে গিয়ে ছবি তুললে পুলিশ বাধা দেয় ও তাদের লাঞ্ছিত করে। পরে এ খবর পেয়ে সেখানে বিএনপির আরও বেশকিছু নেতাকর্মী উপস্থিত হলে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। যাদের মধ্যে দুজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোকুন্ডা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হোসেন অভিযোগ করেন, ছবি তোলার ঘটনায় পুলিশ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। একপর্যায়ে সদর থানার ওসি আমার বুকে লাথি মেরেছে। আমরা তার বিচার চাই।
সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক বিপ্লব হোসেন বলেন, দাওয়াতে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আখেরুল উপস্থিত আছে শুনে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কথাবার্তার একপর্যায়ে সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ আমাদের প্রচণ্ড মারধর করে গাড়িতে তোলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দাওয়াতের সময় স্থানীয় কয়েকজন হিমাগারে গিয়ে ছবি তোলেন। ফলে সেই ছবি ডিলিট করতে বলেন সদর থানার ওসি। একপর্যায়ে পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার সেখান থেকে চলে যান। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কিছুটা মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে উপস্থিত কেউ মামলার আসামি কিনা-এটা আমরা জানতাম না। হিমাগারের দখল নিয়ে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এমন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকালে পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ভুল বোঝাবুঝির এ ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও গোয়েন্দা শাখার ওসি ফিরোজ হোসেনকে গতকালই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।