পাঁচ লাখ টাকার মধু আহরণের টার্গেট মৌচাষি তানভিরের

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ পিএম

সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে বাক্সে মৌচাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের আলগীচর গ্রামের মুহাম্মদ তানভীর শরীফ। শখের খেয়ালে ২০০৯ সালে মৌমাছি চাষে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ১১টি বক্স দিয়ে শুরু করেন মৌচাষ। কয়েক বছরের ব্যবধানে তার মৌ খামারে বর্তমানে মৌ-বক্সের সংখ্যা ৪৫টি। সেই মধু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
সরেজমিন তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকরপুর চকে সাড়ি সাড়ি মৌবক্স বসিয়ে সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করছে তানভীর। এ সময় তিনি মৌচাষের বিভিন্ন দিক ও সম্ভাবনার কথা জানান। শুরুটা শখের বসে হলেও বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভাবেই মৌচাষ করছেন।
তানভীর শরীফ জানান, দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রচুর পরিমাণে সরিষার আবাদ হয়। যার কারণে এ দুই উপজেলায় মৌচাষ করে খুব অল্প পুঁজি আর স্বল্প সময়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। বেকার যুবক যারা রয়েছে, তারা খুব অল্প সময়েই মৌচাষ করে সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবেন।
তানভীর শরীফ জানান, একটি কলোনিতে ২০ হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকে, একটি মৌ-রানী থাকে। শ্রমিক মৌ-মাছিগুলো সারাদিন মধু সংগ্রহ করে। মৌ মাছিরা গাছের পরাগায়নের ঘটানোর ফলে সরিষার উৎপাদন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এটি পরিবেশবান্ধব একটি ক্ষুদ্র শিল্প হওয়ায় মধু আহরণের ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। দশ দিন পর একটি বাক্স থেকে গড়ে ৩-৪ কেজির মতো মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি মধু ৮শ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এ বছর ৭-৮শ কেজি মধু সংগ্রহের ইচ্ছা আছে।
তবে সরিষা চাষে কীটনাশক ব্যবহারের কথা জানিয়ে তানভীর বলেন, সরিষার চাষে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে মৌমাছির অনেক ক্ষতি হয়। এতে ভালোমানের মধুও পাওয়া যায় না। এ উদ্যোক্তা মনে করেন সরকারিভাবে বেসিক কারিগরি শিক্ষা সহাযোগিতা পাওয়া গেলে তার মতো হাজারও তরুণ মৌ চাষে আগ্রহী হয়ে দেশে বেকারত্ব দুরীকরণ ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
এদিকে মধু আহরণের ক্ষেত্রে তানভীরের এমন সম্ভাবনা দেখে ওই এলাকার অনেক তরুণ এখন এ পেশায় আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সঠিক নিয়ম মেনে মধু আহরণ করলে এই ক্ষুদ্র শিল্পটি বৃহৎ আকারে পরিচালনা করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।পাশের জমিতে সরিষার আবাদ করেন কৃষক রহিম। তিনি বলেন, মৌমাছির পরাগায়নের কারণে আগের তুলনায় এ বছরে আমার জমিতে সরিষার উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, এ বছর নবাবগঞ্জে ৩ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। নবাবগঞ্জে দুজন মৌচাষি রয়েছেন। তাদের ১৩৫টি বক্স আছে; যা থেকে প্রতি সাত দিন পরপর ৪০ কেজির মতো মধু সংগ্রহ করা হয়। তবে ওই রকমভাবে কৃষি অফিসে মধু আহরণের কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই।
তিনি বলেন, সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে সরিষার প্রায় ২০-৩০ শতাংশ ফলন বাড়ে। মধু সংগ্রহের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।