Logo
Logo
×

সারাদেশ

৪.৮ কিমি যমুনা রেলসেতু ৩ মিনিটে অতিক্রম

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

৪.৮ কিমি যমুনা রেলসেতু ৩ মিনিটে অতিক্রম

যমুনা নদীর উপর নির্মিত ৪.৮ কিলোমিটার রেলসেতু ১২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৩ মিনিটে অতিক্রম করেছে পর্যবেক্ষণ ট্রেন।

সোমবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বাংলাদেশের রেলওয়ের গভর্মেন্টের ইনস্পেক্টর, সেতুর প্রকল্প পরিচালক ও প্রজেক্ট ম্যানেজারসহ দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সেতুতে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

গভর্নমেন্টে ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশের উপস্থিততে এ পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। সেতুটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। দ্রুততম সময়ে বাণিজ্যিক ট্রেনচলাচলের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তারা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, জাপান-বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে যমুনা নদীর উপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতুর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণমূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে দেশের বৃহত্তর যমুনা রেলসেতুতে রোববার পূর্ণগতিতে ট্রায়াল ট্রেনের (পরীক্ষামূলক) টেস্ট রান আপ ও ডাউন লাইনে চলাচল শুরু হয়েছে। মেধা, শ্রম ও প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারায় উচ্ছ্বাসিত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার দুপুরে পৌনে ২টার দিকে চারটি কোচ ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে সেতুতে ট্রেন চালানো হয়। এ সময় ট্রেনের গতি এবং সেতুটির কম্পন পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর ফরিদ আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান ও জাপানের প্রকল্প পরিচালক ম্যাকহ্যাভিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। পরে তারা ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে সেতুটি পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে গত রোববার সকালে প্রথম পর্যায়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর দুপাশ থেকে দুটি ট্রেন পারাপারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর পর্যায়ক্রমে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।

যমুনা রেলওয়ে সেতুর চিফ সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ণগতিতে ট্রেন চলছে। সোমবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এতে দেখা দেছে ২টা ৪৭ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে ট্রেনটি পশ্চিম পাড়ের সেতুর শেষ অংশ অতিক্রম করে। এটিই ছিল সর্বশেষ পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল। এখন পুরো সেতু পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কিনা। এরপর উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেতুটি।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানায়, সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর উভয়প্রান্তের স্টেশনে রেল ক্রসিংয়ের সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আরও বাড়বে।

যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, যতগুলো প্যারামিটার দেখানো হয়েছে সবগুলো সন্তোষজনক। এই মুহূর্তে নন ইন্টারলক কালার লাইট সিস্টেমের মাধ্যমে এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর ফরিদ আহমেদ বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল পর্যবেক্ষণ করে তিনি সন্তুষ্ট। তারপরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক সিগনাল লাইট এবং ইন্টারলক সিগন্যালিং ব্যবস্থা (সিবিআই)। এগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে পুরোপুরি সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে পরবর্তীতে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। তবে তিনি আশা করছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজগুলো সম্পন্ন হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর রেলসেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।

প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশিয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম