Logo
Logo
×

সারাদেশ

ডিলারকে জিম্মি করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল মাসুদের

Icon

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২২ পিএম

ডিলারকে জিম্মি করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল মাসুদের

কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার  মো. আনোয়ার জাহিদ। এজন্য ডিলারকে জিম্মি করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) মো. মাসুদ শরীফের (২৪)।

সোমবার দুপুরে বাউফল থানায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম সজল, সহকারী পুলিশ সুপার আরিফ মুহাম্মদ শাকুর, বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন ও পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলামসহ অভিযানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সুপার বলেন, ঝালকাঠি সদর থানার বালিগোনা গ্রামের আকবর শরীফের ছেলে মো. মাসুদ শরীফ (২৪) একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) হিসেবে বাউফলে চাকরি করেন। ব্যবসায়ী শিবু বণিক ওই কোম্পানির ডিলার। ডিলারের সঙ্গে লেনদেন করার সুবাদে ব্যবসায়ী শিবু বণিকের প্রচুর অর্থ সম্পদ আছে বলে জানতে পারেন মাসুদ। আর তাই ডিলার শিবু বণিককে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় পড়ে যান মাসুদ।

তিনি বলেন, জাহিদ নিজে নিজেই পরিকল্পনা করেন ডাকাতি ও শিবু বণিককে অপহরণ করার। তার এ বাসনা বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের আরেকজনের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে এমন পরিকল্পনা নিয়ে কচুয়া গ্রামে মাসুদের ভাড়া বাসায় একাধিকবার বৈঠক করেন মাসুদ ও অন্য সদস্যরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কোনো এক শুক্রবার সন্ধ্যায় ডাকাতি করবেন।

এসপি বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ৯ সদস্যের ডাকাত দল শিবু বণিকের কানু প্রিয় ভাণ্ডারে ডাকাতি করেন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কর্মচারী তাপস ও শংকরের হাত-পা বেঁধে ফেলে ক্যাশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লুট করে ব্যবসায়ী শিবু বণিককে অপহরণ করে নদী পথে তেঁতুলিয়া নদীর দিকে চলে যায়। পরে একটি নির্জন চরে তাকে (শিবু বণিক) আটকে রেখে পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১৫ মিনিটের মধ্যে পুরো ডাকাতি ও অপহরণ প্রক্রিয়া শেষ করে ডাকাতরা।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে থানা ও জেলা  পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একাধিক দল বিশেষ অভিযান অব্যাহত রাখে। রোববার রাতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কচুয়া গ্রামের  মুন্সিবাড়ির মসজিদের সামনে থেকে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- পরিকল্পনাকারী ফ্রেশ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ঝালকাঠির বালিগোনা গ্রামের মাসুদ শরীফ (২৪),  বাউফলের বড় ডালিমা গ্রামের মিন্টু মৃধার ছেলে মিরাজ মৃধা (২০),   একই গ্রামের বাবুল প্যাদার ছেলে মো. জহির প্যাদা (২৭), গকুল চন্দ্র ওরফে কালু মিস্ত্রির ছেলে বিধান চন্দ্র মিস্ত্রি (২২) ও ভোলার দক্ষিণ আইচার চর পাচুকিয়া গ্রামের জাকির সিকদারের ছেলে মো. মাহফুজ (১৬)। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৫টি দেশীয় অস্ত্র, ৭টি মোবাইল ফোন, দুই জোড়া জুতা, মোবাইল ফোনের একাধিক সিম, একটি মানকি টুপি ও লুট করা দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ আরও জানান, এ ঘটনার সঙ্গে  জড়িত আরও ৪ জন পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তিনিই ঢাকা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, জ্যাকেট, জুতা, মাস্ক, মানকি টুপি এবং চন্দ্রদ্বীপ থেকে ট্রলার ভাড়া করে দেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ চারজন পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।

শিবু বণিকের ভাগ্নি (বড় বোনের মেয়ে) অ্যাডভোকেট অনুরাধা রায় বণিক বলেন, শনিবার দুপুরে তার মামার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। ফোনটি রিসিভ করার পর অপরপ্রান্ত থেকে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে অপহরণকারীদের সঙ্গে দেনদরবার চলে। রোববার বিকাশের মাধ্যমে ৫টি নম্বরে ৯৬ হাজার টাকা নেয় অপহরণকারীরা। বাকি টাকা পরে দেওয়ার শর্তে অপহরণকারীরা শিবু বণিককে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা পুলিশ প্রশাসনকে জানালে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে। প্রায় ৫২ ঘণ্টা পর রোববার মধ্যরাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রাম থেকে শিবু বণিককে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায়কে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ডাকাতির ঘটনার পর শনিবার ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় বণিকের স্ত্রী কৃষ্ণা বণিক বাদী হয়ে ডাকাতি ও অপহরণ মামলা করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম