বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে বাপ্পি
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বৈরাচার সরকারের বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে বাপ্পি নামে নবম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্র। তার চিকিৎসা করাতে নিঃস্ব পরিবারটিতে এখনো মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা। টাকার অভাবে প্রায় বন্ধ রয়েছে বাপ্পির চিকিৎসা।
শুক্রবার বাপ্পির পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন তার বাবা। তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
মো. বাপ্পি (১৬) ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার তললী গ্রামের মো. মোজাম্মেলের ছেলে। পরিবারের সঙ্গে শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা গ্রামের জহিরুল ইসলাম প্রিন্সের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় শ্যামা মডেল একাডেমিতে নবম শ্রেণিতে পড়ত।
স্থানীয়রা বলেন, ১৬ বছর বয়সি মেধাবী ছাত্র মো. বাপ্পি। গত আগস্টে বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে যখন হত্যালীলায় মেতে উঠে, তখন ছাত্র-জনতার পক্ষে আন্দোলনে প্রথমসারিতে অংশ নেয় বাপ্পি। গত ৩ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় ছাত্রজনতা। এ সময় কেওয়া বকুলতলা এলাকায় নির্বিচারে পুলিশের ছোড়া বন্দুকের বুলেট বাপ্পির কোমরের পেছনে বিদ্ধ হয়। বুলেটের আঘাতে বাপ্পির নাড়িভুঁড়ির ৭টি জায়গাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এ সময় কয়েকটি অস্ত্রোপচারসহ কেটে ফেলা হয়েছে পায়ুপথও। পরবর্তীতে টাকার অভাবে প্রায় বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা। বর্তমানে সিএমএইচের চিকিৎসকের পরামর্শে আছে।
বাপ্পির বাবা মোজাম্মেল বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ ৯ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই টাকার বেশির ভাগই আমার ব্যবসার মূলধন ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ বাবদ নেয়। এখন ঋণের টাকার চাপ ও ছেলে চিকিৎসার খরচ জোগাতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাপ্পিকে নিয়ে ভয়ে আছি, তার শরীরে পচন ধরে গেছে, অভাবের তাড়নায় ঠিকমত চিকিৎসা করতে পারছি না, ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার টাকা বাকি রয়ে গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি টাকার জন্য মামলার হুমকি দিচ্ছে।
এমন অসহায়ত্বের কথা শুনে শুক্রবার বাপ্পিকে দেখতে ছুটে যান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। এ সময় তার বাবার হাতে নগদ অর্থ প্রদান করেন। এছাড়াও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ সময় বাড়ির মালিক পৌর বিএনপির ৭নং ওয়ার্ডের দপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রিন্স আহত বাপ্পির ঘর ভাড়া বকেয়া ৭০ হাজার টাকা মওকুফ করে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব আবু তাহের প্রধান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সামসুল হক শ্যামল, শ্রীপুর শ্রমিক দলের সভাপতি এনামুল হক খোকন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি এসএম পলাশ চঞ্চল, ওয়ার্ড বিএনপির নেতা জহিরুল ইসলাম প্রিন্স, মোবারক হোসেন তুহিন বেপারী, আশ্রাব আল নিজাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জহিরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক রতন, জাকিরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, ছাত্রদল নেতা রাসেল সরকার, মাসুদুর রহমান মাসুদসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।