Logo
Logo
×

সারাদেশ

৩ সেতু নির্মাণে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি, উঠতে হয় মই দিয়ে

Icon

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮ পিএম

৩ সেতু নির্মাণে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি, উঠতে হয় মই দিয়ে

সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে আট বছর আগে। সেতু নির্মাণের পর মানুষের ভোগান্তি দূর হওয়ার কথা থাকলেও আরও বেড়েছে। কাজ শেষ হলেও সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হচ্ছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।

কাশিয়ানী উপজেলার মাঝকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কে খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। পুরো শেষ না করে কাজের বিল ও জামানতের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার। 

বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দলের সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। 

দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উপজেলার মাঝকান্দি গ্রামে তিনটি সেতুসহ এইচবিবি সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনা করে জেলা পরিষদ। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য কাশিয়ানীর মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। প্রতিটি সেতুতে ১২ মিটার করে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ) নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে চূড়ান্ত বিল ও জামানতের টাকাও উত্তোলন করে নেন তিনি। 

তৎকালীন জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিচুর রহমান কাজ বুঝে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করলেও দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমান একটি সেতুতে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছেন এলাকাবাসী। এতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। অপর দুই সেতুর অ্যাপ্রোচে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। 

মাইজকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বেল্লাল খান, আমিরুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম জানান, ভোগান্তি দূর করতে সেতু নির্মাণ করে আরও ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা মাঝে-মধ্যে সিঁড়ি থেকে পড়ে আহত হন। দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান তারা। 

ওড়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল আলম বিটুল বলেন, ‘২০১৭ সালে জেলা পরিষদ আমার ইউনিয়নের মাইজকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কে আড়কান্দি এলাকায় তিনটি সেতু নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেতুগুলোর অ্যাপ্রোচ না করেই অফিস কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। আমি এলাকাবাসীর সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪০ দিনের কর্মসূচির লোক দিয়ে দুটি সেতুতে মাটি দিয়ে কোনোমতে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে একটিতে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছেন এলাকাবাসী। দ্রুত সেতু তিনটিতে অ্যাপ্রোচ নির্মাণ করা হোক।’ 

জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন উৎকোচের বিনিময়ে স্বাক্ষর করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিলে প্রথমে স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে ঠিকাদার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন।’

দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা সরেজমিন গিয়েছিলাম। বুধবার প্রকল্প বামস্তবায়ন অধিদপ্তর জেলা পরিষদে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছি। রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে মামলা রুজু করার জন্য সুপারিশ করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম