বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর পদে নেতাকর্মীদের নিয়োগ না হওয়ায় এবার সংস্থার গোদাগাড়ী কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। 

বিএনপির ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১ এর কার্যালয় ঘেরাও করা হয়।

আগের দিন বুধবার জেলার তানোর উপজেলা কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে তানোর কার্যালয়ে তালাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী গিয়ে চাবি নিয়ে কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়। 

বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ী কার্যালয়ে তালা দেওয়া না হলেও রোববারের পর বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তানোরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতা মফিজ উদ্দিন হুংকার দিয়ে বলেন, এখন থেকে তানোরে বিএনপির কথা ছাড়া বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না। আমরা যা বলব তাই করতে হবে কর্মকর্তাদের। 

গোদাগাড়ীতে স্থানীয় বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, হাসিনার দুঃশাসন আমরা সহ্য করেছি। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুদিন পেয়েছি; কিন্তু হাসিনার দোসররা বিএনপির নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে ৪৫০ এবং তানোরে ৫৩৬টি গভীর নলকূপ আছে। সম্প্রতি এসব গভীর নলকূপের আগের অপারেটরদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষার পরই অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। সদর দপ্তরের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এরপর ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয় বিএমডিএর সদর দপ্তর থেকে। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দুই উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএমডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দীনের ভাই ড. আসাদ উজ জামান। তার আরেক ভাই প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েক মেয়াদে ছিলেন বিএনপির এমপি ও মন্ত্রী। আসাদ উজ জামানের নিজ উপজেলা গোদাগাড়ীতেই নেতাকর্মীরা বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও করলেন।

নেতাকর্মীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১ এর কার্যালয়ে যান। এ সময় তারা সেখানে সমাবেশ করেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মালেক সমাবেশ পরিচালনা করেন। 

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়োগ পেয়েছেন।

সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, হাসিনার দুঃশাসন আমরা সহ্য করেছি। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুদিন পেয়েছি। তারপরেও হাসিনার দোসরেরা আনাচে-কানাচে বসে আছে। হাসিনার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। হাসিনার পতনের পরও আমাদের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। 

আগামী রোববারের মধ্যে যদি বিএমডিএ এই নিয়োগ স্থগিত না করে, তাহলে আমরা বৃহৎ কর্মসূচি দেব।

মোহনপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওসমান গনি বলেন, এই লতিফ (বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-১ এর সহকারী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ) বলেছিল বিএনপির পক্ষ থেকে লিস্ট দেন। ৯টা ইউনিয়ন থেকে ৯টা লিস্ট জমা দেওয়া ছিল। প্রত্যেকটা লিস্ট থেকে মাত্র ২-৩ জন করে নিয়েছে। আর কারও নিয়োগ হয়নি। তার গোদাগাড়ীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাকে গোদাগাড়ী থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো তালিকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, আমরা কোনো লিস্ট নেইনি। তারা তাদের নেতাদের কাছে লিস্ট দিতে পারেন। আমরা লিস্ট নেব কেন? উচ্চপর্যায়ের একটা কমিটি ভাইভা গ্রহণ করেছে। তারা যোগ্যদের নির্বাচিত করেছেন। এখন যে ঝামেলা হচ্ছে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।