‘পুটিয়া বিল নিলেগা তো আমরার না খাইয়া মরণ লাগব’
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শতবর্ষী বিল পুটিয়া ছয় বছরের স্কিম আবেদনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কয়েক শতাধিক জেলে পরিবার।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা ভলাকূট ইউনিয়নের ভলাকূট গ্রামের দাসপাড়ার অবস্থিত পুটিয়া বিলের পাশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েক শতাধিক জেলে পরিবার। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ভলাকূট ইউনিয়নের ভলাকূট গ্রামের দাসপাড়ায় কয়েক শতাধিত জেলে পরিবারের বসবাস। শতবছর ধরে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুটিয়া বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
এছাড়া ভলাকূটকান্দি ও কান্দিপাড়ার অনেক জেলে এ বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভলাকূট কান্দিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় লিমিটেড নামে সমিতির মাধ্যমে ইজারা নিয়ে পুটিয়া বিলে মাছ ধরেন এখানকার জেলেরা। সম্প্রতি পাশের গোয়ালনগর ইউনিয়নের ভিটাডুবী গ্রামের ভিটাডুবী উত্তর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি পুটিয়া বিল ছয় বছরের স্কিমে ইজারা নিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। যদিও পুটিয়া বিল ভলাকূট গ্রামের কাছে অবস্থিত। এদিকে ভিটাডুবি গ্রামের ভিটাডুবী উত্তর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বয়স প্রায় বারো বছর ও এর অধিকাংশ সদস্য প্রকৃত জেলে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় জেলে পরিবারের সদস্য মনসা রানী দাস বলেন, হগলেই তো জাল বাইয়া খায়, চাকরি তো আর সবাই করে না। এইবার থেইক্কা ভিটাডুপি সমিতি বলে বিল নিতগা। আমরা বাচ্চা-কাচ্চা লইয়া কেমনে চলতাম?
প্রবীণ জেলে ৮০ বছর বয়স্ক ভুষণ সাহাজী বলেন, সংগ্রামের দশ বছর আগে থেইক্কা এই বিল আমরা বাইয়া খাই, অহন বলে ২০-৩০ জনের একটা অবৈধ সমিতি ইডা নিতগা। বিল নিলেগা তো আমরার না খাইয়া মরণ লাগব।
ভলাকূট কান্দিপাড়া মৎস্যজীবী লিমিটেড সমবায় সমিতির সভাপতি পঙ্কজ দাস বলেন, আমরা লেংটা থেইক্কা দেখতাছি আমরার ময়-মুরুব্বি এই বিল বাইতাসে। আমরা বিশ বছর ধইরা এই সমিতির মাধম্যে বিল বাইতাছি। পুটিয়া বিল না পাইলে বাল-বাচ্চা লইয়া না খাইয়া মরা লাগব।
ভিটাডুবী উত্তর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বর্তমান সভাপতি সতীশ দাসকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এ বিষয়ে ভিটাডুবী উত্তর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাধেশ্যাম বলেন, শুনছি আমরার সমিতি বিল পাইছে। এর বেশি কিছু বলতে পারতাম না।
নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী রবিউস সারোয়ার বলেন, আমরা উপজেলা সমবায় অফিস ও মৎস্য অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠাই। যারা আবেদন করেছে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহিনা নাসরিন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।