Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে গ্রামে একটিই বাড়ি, জনসংখ্যা ৩২

Icon

জাহিদ রিপন, ফরিদপুর

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৩ পিএম

যে গ্রামে একটিই বাড়ি, জনসংখ্যা ৩২

ফরিদপুরে মাত্র একটি বাড়ি নিয়েই গঠিত দেশের দ্বিতীয় ছোট গ্রাম বিষ্ণুপুর। মানুষের কাছে বেষ্টপুর বলে পরিচিত। আগে থেকেই গ্রামটি ছোট। লোকসংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারেই ছোট গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখন একটি বাড়ি নিয়ে রয়েছে গ্রামটি। জনসংখ্যা মাত্র ৩২ জন।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নে এ বেষ্টপুর গ্রামের অবস্থান।

উপজেলার দক্ষিণ দিকের সর্বশেষ প্রান্তের ওই বাড়িতে বসবাস করছে ১০টি পরিবার। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ মোট ৩২ জন মানুষের বসবাস। এই বাড়ির গ্রামের উত্তরে বোয়ালমারীর টোংরাইল গ্রাম, দক্ষিণে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রাম। 

সরেজমিন দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রূপাপাত ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত টোংরাইল, সুতালীয়া, বনমালীপুর, কদমী গ্রামের মধ্যবর্তী গ্রাম হলো এই বিষ্ণুপুর।

প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গায় বিষ্ণুপুর গ্রামটি শুরু থেকেই কয়েকটি হিন্দু পরিবারসহ ৭-৮ বাড়ি নিয়ে গঠিত ছিল। গ্রামের চারদিকে ফসলি জমি, ও কাদামাটিতে পরিবেষ্টিত। খালি পায়ে কাদামাটি ও পানি পেরিয়ে কোনোরকমে ঢুকতে হয় রাস্তাবিহীন ও উন্নয়নবঞ্চিত এই গ্রামে। বছরের ছয় মাস পানি, ছয় মাস ফসলি জমির ভেতর দিয়েই চলাচল করতে হয় গ্রামটির বাসিন্দাদের। বর্ষার মৌসুমে একমাত্র ভরসা নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলা।

বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা সলেমান মোল্লা (৬০) জানান, নানা বঞ্চনা, দুর্ভোগ ও দুর্গতি এবং রাস্তাঘাট না থাকায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা একটা পরিবার গ্রামটিকে টিকিয়ে রেখেছি। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আসেন শুধু ভোটের সময়। ভোট চলে গেলে তাদের দেখা যায় না। এমপিদের কোনোদিন আমাদের গ্রামে আসতে দেখিনি। 

গ্রামের বাসিন্দা হেমায়েত মোল্লা বলেন, আমাদের মূল সমস্যা যাতায়াতের। দেড় কিলোমিটার দূরে প্রাইমারি স্কুল, দুই কিলোমিটার দূরে হাইস্কুলে গিয়ে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। গ্রামে নেই কোনো মসজিদ। আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রতি বছর দুই ঈদের নামাজ এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে হয়। গ্রামটি ছোট হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত এবং অবহেলিত।

গ্রামের পার্শ্ববর্তী টোংরাইল গ্রামের বাসিন্দা রিপন বিশ্বাস ও রমেন বিশ্বাস জানান, বিষ্ণুপুর গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাতায়াতের জন্য নেই কোনো রাস্তাঘাট। জমির মাঝ দিয়ে ছোট একটি আইল দিয়ে চলাচল করেন তারা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজন নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। শুকনো মৌসুমেও তাদের কাদা মাড়িয়ে চলতে হয়। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, ওই গ্রামের কথা আমি জানি না। খোঁজখবর নেব। আমি গ্রামটি দেখতে যাব। 

প্রসঙ্গত, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ‘শ্রীমুখ’ গ্রামটি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম। বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নে অবস্থিত শ্রীমুখ গ্রামটি। সরকারি গেজেটভুক্ত এই গ্রামটিতে স্বাধীনতার আগে থেকেই বসবাস করে আসছে একটি মাত্র পরিবার। সেই হিসেবে দ্বিতীয় ছোট গ্রাম ফরিদপুরের বোয়ালমারীর এই বিষ্ণুপুর।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম