রাস্তার ইট চুরি, পালিয়েছে বিএনপি নেতা কারাগারে ইউপি সদস্য
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম
বরগুনার বেতাগীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তার কয়েক হাজার ইট চুরির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মাসুদ আলম মৃধাসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন পুলিশ। তবে ঘটনার পর এলাকা থেকে লাপাত্তা উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ইউপি কার্যালয় এলাকায় রাস্তার পুরাতন ইট চুরি করে বিক্রির সময় এলাকাবাসী দুইজনকে হাতেনাতে আটক করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকা থেকে সটকে পড়েন ওই বিএনপি নেতা সিদ্দিক। এ ঘটনায় হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শৈলেন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সংশ্লিষ্ট ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ আলম, জালাল খলিফা ও রিয়াজ সরদারকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যুগান্তরকে বলেন, ইউপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে মাটির কাজ চলছে- এ সুযোগে রাতের আঁধারে বিএনপি নেতা সিদ্দিক ও স্থানীয় একটি চক্র মিলে রাস্তায় বিছানো হাজার হাজার ইট উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ওই একই সড়কের বন বিভাগের রোপিত ২৩টি তালগাছ ও বেশ কয়েকটি আকাশমনি গাছ কেটে নিজের মতো করে আত্মসাৎ করেছেন বিএনপি নেতা সিদ্দিক।
তারা আরও বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন সিদ্দিক জানিয়েছেন ইউএনও তার জিম্মায় রাখতে বলেছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হোসনাবাদ ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মুক্তা বেগমের স্বামী ওই বিএনপি নেতা সিদ্দিক। দলীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে স্ত্রীকে প্যানেল চেয়ারম্যান বানিয়ে অপকর্মের রাজত্ব তৈরি করেছেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের ভাতার নামে অর্থ আদায়সহ সরকারি খাসজমি দখল করে কাঠ চেরাইয়ের মিল ও বসতবাড়ি নির্মাণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিগত দিনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কারও হন ওই বিএনপি নেতা সিদ্দিক।
ইটচুরির বিষয়ে ফোনালাপে যুগান্তরকে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান জানান, হোসনাবাদ ইউপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে পাউবোর (সড়ক উন্নয়নে মাটির টেকসই বেড়িবাঁধ) নির্মাণকাজ চলছে। ওই রাস্তার পুরাতন ইটগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ছিল। স্থানীয় ইউপি সদস্য বিষয়টি আলাপ করায় ইটিগুলো উঠিয়ে রাখি।
ইট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট উঠানোর লেবার খরচের বদলে তাদের তিন-চার হাজার ইট দেওয়া হয়েছে। চুরি করে বিক্রি করিনি। তবে উপজেলার বিএনপির একটি গ্রুপ কোণঠাসা করতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাটি করিয়েছেন।
বেতাগী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, চুরি করে বিক্রি করা ইটের কিছু পরিমাণ পুলিশ উদ্ধার করেছে এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় রাখা হয়েছে। চুরির ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা রুজু হয়েছে; ইতোমধ্যে তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য আসামি পলাতক বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী যুগান্তরকে বলেন, সরকারি রাস্তার ইট চুরির ঘটনায় সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় (ফৌজদারি অপরাধ) ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে অতিদ্রুত জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হবে।