‘অনুমতি ছাড়া তানোরের বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না’ বিএনপি নেতার হুংকার
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ পিএম
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে সুপারিশকৃত দলীয় সব নেতাকর্মীদের নাম না আসায় রাজশাহীর তানোর বিএমডিএ কার্যালয় ভাঙচুর করে তালা দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুরে ঘটে এ ঘটনা।
তানোর উপজেলা বিএনপির তিন নেতার নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বাইরে থেকে প্রধান ফটকে তালা মেরে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান। দুপুরে তারা বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।
ফলে বুধবার বিএমডিএর তানোর কার্যালয়ে বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারেননি, আবার যারা ভেতরে ছিলেন তারাও আটকে পড়েন।
বিএনপি নেতারা হুংকার দিয়ে বলেছেন, তাদের অনুমতি ছাড়া তানোরের বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা কাজ করতে পারবেন না। কাজ করার আগে তাদের জানিয়ে অনুমতি নিতে হবে।
বিএমডিএ তানোর জোনাল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএমডিএর অধিকাংশ গভীর নলকূপের আগের অপারেটরদের তাড়িয়ে দিয়ে দখল করে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে মৌসুমের সেচ কর্মসূচিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
রাজশাহীর তানোর এলাকায় বিএমডিএর ৫৩৬টি গভীর নলকূপ রয়েছে। বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে পরিচালন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন হলে নতুন করে অপারেটর নিয়োগের নোটিশ জারি করা হয় অক্টোবর মাসে। গত ১৫ নভেম্বর ছিল অপারেটর পদে আবেদনের শেষ তারিখ। তানোরের ৫৩৬টি গভীর নলকূপের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ৫১৬টি। এসব গভীর নলকূপের অপারেটর পদে আবেদন পড়ে ১ হাজার ৬৯৪টি। পর্যায়ক্রমে অপারেটর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
৩১ ডিসেম্বর অপারেটর নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়োগে তানোরের স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে আগেই নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এসব বিএনপি নেতার সুপারিশকৃত অধিকাংশ প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন।
অভিযোগে জানা গেছে, তানোরের ৫১৬টি গভীর নলকূপে অপারেটর পদের আবেদনকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই বিএনপির জেলা ও উপজেলা নেতাদের সুপারিশ নিয়ে আবেদন জমা করেছিলেন।
মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, তানোরের বিএনপি নেতাদের সুপারিশকৃত আবেদনকারীদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে বাদ পড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিএমডিএর তানোর জোনাল কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তানোর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান, যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন। বিক্ষোভকারীরা বিএমডিএ কার্যালয়ের দিকে বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন। এ সময় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বাইরে থেকে বিএমডিএ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেন। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে আটকা পড়েন। পরে বিএনপি নেতারা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতা মফিজ উদ্দিন হুংকার দিয়ে বলেন, এখন থেকে তানোরে বিএনপির কথা ছাড়া বাতাসও নড়াচড়া করতে পারবে না। আমরা যা বলব তাই করতে হবে কর্মকর্তাদের।
বিএনপি নেতা মফিজ উপস্থিত নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে আরও বলেন, আপনাদের দখলে যেসব গভীর নলকূপ আছে সেগুলোর দখল ছাড়বেন না। আমরা যা বলব সেটাই করতে হবে কর্মকর্তাদের। আগামী রোববারের মধ্যে নতুন অপারেটর নিয়োগ বাতিল করে যাদের দখলে আছে আমাদের সেসব নেতাকর্মীর নামে দিতে হবে।
বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান বিএমডির জোনাল প্রকৌশলী জামিলুর রহমানকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেন সমাবেশ থেকে। প্রকৌশলী জামিলুর রহমানকে সাসপেন্ড করারও দাবি করেন তিনি।
মিজান আরও বলেন, আমাদের কথামতো অপারেটর দিতে হবে। না হলে বিএমডিএর এই কার্যালয়ের তালা খোলা হবে না। চাবি আমার কাছে আছে। আমরা রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপর বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, এই অপারেটর নিয়োগ আমরা মানি না। আমাদের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর তানোর জোনাল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী জামিলুর রহমান বলেন, অপারেটর নিয়োগে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের কমিটি এক্ষেত্রে কাজ করেছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির কারো একক সিদ্ধান্ত ছিল না। আমরা যোগ্যদেরই নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা বঞ্চিত হয়েছেন তারা বিক্ষোভ করেছেন এবং কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিএমডিএ কার্যালয়ে তালা মারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বরেন্দ্র কার্যালয়ে তালা দিয়েছিল। বিকালে আমি চাবি দিয়ে দিয়েছি। অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে বসব। রোববার পর্যন্ত তানোরে নতুন অপারেটর নিয়োগ বাতিল না হলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করব।